You dont have javascript enabled! Please enable it!

কলাকোপা গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কলাকোপা গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা) ১০ই মে সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ গণহত্যায় কলাকোপা গ্রামের ১১ জন নিরীহ মানুষ শহীদ এবং বেশ কয়েকজন আহত হন।
৯ই মে পাকিস্তানি বাহিনী নবাবগঞ্জে প্রবেশ করে নবাবগঞ্জ হাইস্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করে। পরের দিন ১০ই মে তারা কলাকোপায় গণহত্যা চালায়। ঘটনার দিন স্থানীয় শান্তি কমিটি আলবদর ও রাজাকার বাহিনীর সদস্য সিরাজউদ্দিন আহমেদ ওরফে সিরাজ মাস্টার (কলাকোপা), আব্দুল জব্বার বেপারী (সমসাবাদ), মতি মিয়া (বক্সনগর), পাচু মিয়া (যন্ত্রাইল), কালু মেম্বার (কাশিমপুর), আশ্রাব খলিফা (যন্ত্রাইল), জাহেদ আলী (যন্ত্রাইল) প্রমুখের সহায়তায় হানাদার বাহিনীর সদস্যরা উপজেলার কলাকোপা গ্রামের হিন্দু মহল্লাগুলোতে আক্রমণ করে। তারা প্রথমে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজনকে পাকড়াও করে এবং বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন করে মঠবাড়িতে জড়ো করে। অতঃপর তাদের কলাকোপা বড়নগর খালের কাছে বটগাছের নিচে নিয়ে পুনরায় নির্যাতন করে। সেখান থেকে তাদের কলাকোপা পুরাতন বাজারে দুধহাটায় নিয়ে আবারো তাদের ওপর নির্যাতন চালায়। কেউ-কেউ পণ্য-সামগ্রী আনার নাম করে পালাতে সক্ষম হয়। আটককৃত ৩৬ জন গ্রামবাসীর মধ্যে ২১ জনকে কলাকোপা মঠবাড়ির হরিভবনের পেছনে লাইনে দাঁড় করিয়ে এলএমজি দ্বারা ব্রাশ ফায়ার করে হানাদাররা গণহত্যা সংঘটিত করে। লাইনে দণ্ডায়মান কয়েকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বেঁচে যায়। গণহত্যার পর হানাদাররা কলাকোপা বাজারে লুণ্ঠন চালায়।
কলাকোপা গণহত্যায় শহীদ গ্রামবাসীরা হলেন- রবিলোচন শীল (পিতা চন্দ্ৰমোহন শীল, মধ্যনগর), গৌর সাহা (পিতা প্রাণবল্লভ সাহা, বড়নগর), চিত্তরঞ্জন রায় (পিতা রাধারমণ রায়, গোয়ালনগর), শম্ভুনাথ সাহা (পিতা অশ্বিনী কুমার সাহা, মধ্যনগর), টুণ্ডা বলাই (মধ্যনগর), কানাই সাহা (পিতা অনাথ সাহা, বড়নগর), বলরাম সাহা (পিতা রমণী মোহন সাহা, গোয়ালনগর), গৌর ঠাকুর, গৌর সাধু (সাভার, ঢাকা), কিশোরী লাল ও বিপদ ভঞ্জন চক্রবর্ত্তী। গণহত্যায় মারাত্মকভাবে আহত কয়েকজন হলেন- আশুতোষ অধিকারী, শ্যামাপদ মালাকার, হরেকৃষ্ণ অধিকারী, সাক্ষী গোপাল অধিকারী, অরবিন্দ সাহা, মনিন্দ্র নারায়ণ সাহা প্রমুখ।
গণহত্যার পর স্থানীয় সুবল সাহা (সুবল ফকির) এবং তার পুত্র মুক্তিযোদ্ধা তাপস কুমার সাহা গণহত্যার শিকার ৬ জন শহীদদের লাশ কলাকোপা গ্রামের দেওয়ানজী বাড়িতে গণকবরে সমাহিত করেন এবং ৫ জনের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেন। [মো. আনোয়ার হোসেন ও আব্দুল মালেক সিকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!