You dont have javascript enabled! Please enable it!

কলাখাওয়া যুদ্ধ (ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম)

কলাখাওয়া যুদ্ধ (ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম) সংঘটিত হয় এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহে। এতে পাকবাহিনী পরাজিত হয়ে পিছু হটে।
কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা নদীর একটি ঘাটের নাম কলাখাওয়া ঘাট। ধরলা নদী পার হয়ে কলাখাওয়া ঘাট দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তাঞ্চল ফুলবাড়ীতে ঢোকার চেষ্টা করত। এ ঘাটে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধ, হত্যাকাণ্ড ও নানা নৃশংসতা সংঘটিত হয়।
কুড়িগ্রাম শহরে অনুপ্রবেশের পূর্বে এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এক দল পাকসেনা ধরলা নদী পারি দিয়ে কলাখাওয়া ঘাট দিয়ে ফুলবাড়ীতে ঢোকার চেষ্টা করে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের কারণে তারা ঢুকতে ব্যর্থ হয়। পাকিস্তানি বাহিনী কলাখাওয়া ঘাট দিয়ে নদী পার হওয়ার সময় নৌকা তীরে ভেড়াতে দেরি করায় নৌকার মাঝিকে গুলি করে হত্যা করে। ঘাটের পাশে শমসের ও মনির নামের ২ জনকে পাকসেনারা গুলি করে। এতে শমসের সঙ্গে-সঙ্গে নিহত এবং মনির উদ্দিন মারাত্মকভাবে আহত হন। আহত মনিরকে কোচবিহারে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।
পাকবাহিনী ধরলা নদী পার হয়ে ফুলবাড়ী থানার বড়ভিটা ইউনিয়নের চর খাটামারিতে প্রবেশ করে। এ গ্রামের কিছু দূরেই আগে থেকে মুক্তিবাহিনীর একটি দল অবস্থান করছিল। তাঁরা পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যদের অনুপ্রবেশের কথা শুনে তাদের দিকে গুলিবর্ষণ করেন। পাকসেনারা পাল্টা আক্রমণ করলে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র গুলি বিনিময় হয় সারাদিন ধরে যুদ্ধ চলে। এক সময় অপরিচিত পথ, প্রতিপক্ষের প্রবল আক্রমণ, অল্প জনবল এবং সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় পাকিস্তানি সৈন্যরা পিছু হটে ধরলা নদীর দক্ষিণ পাড়ে ফিরে যায়।
এছাড়া বিভিন্ন সময় পাকিস্তানি বাহিনী কলাখাওয়া ঘাটে এসে এলোপাতাড়ি গুলি ও হত্যাকাণ্ড চালাত। নিহতদের লাশ তারা নদীতে ভাসিয়ে দিত। এখানে পাকসেনাদের নৃসংশতার শিকার হন ইছব আলী, আনছার কমান্ডার আব্দুল হক, আব্দুল হামিদ, মফিজ উদ্দিনসহ অনেকে।
মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার জন্য পাকসেনারা প্রায়ই কলাখাওয়া ঘাট এলাকায় আসত। তারা বড়বাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পাঙ্গারানী লক্ষ্মীপ্রিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে ধরে মাঝে-মধ্যে কলাখাওয়া ঘাটে আনত। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার জন্য তাঁর ওপর অত্যাচার চালাত। পার্শ্ববর্তী বড় বাসুরিয়া গ্রামের ছাত্তার হাজী ছিল পাকিবাহিনীর প্রধান সহযোগী। সে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িঘর চিনিয়ে দিত। তার দেখানো অনেক বাড়িঘর পাকবাহিনীর দেয়া আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়।
৬ই নভেম্বর কলাখাওয়া ঘাটে মোকলেছ কোম্পানির একজন মুক্তিযোদ্ধা গ্রেনেড সেট করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। গ্রেনেড বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে তিনিসহ ৪ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও একজন আহত হন। আহত মুক্তিযোদ্ধাকে চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠানো হয়। ৯ই নভেম্বর পাকবাহিনী কলাখাওয়া ঘাটের দক্ষিণ দিকের আইরখামার, বড়বাড়ি ও আশপাশের এলাকায় গণহত্যা ও কয়েকশত ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। দর্জিপাড়া ও ছোট বাসুরিয়ায়ও তারা হত্যাকাণ্ড চালায়। এতে পাঙ্গারাণী লক্ষ্মীপ্রিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম, মুজিব বাহিনীর রংপুরের সংগঠক ও কারমাইকেল কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার মুখতার ইলাহীসহ অনেকে শহীদ হন। [আব্দুল খালেক ফারুক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!