You dont have javascript enabled! Please enable it! কলাগাছিয়া যুদ্ধ (বন্দর, নারায়ণগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

কলাগাছিয়া যুদ্ধ (বন্দর, নারায়ণগঞ্জ)

কলাগাছিয়া যুদ্ধ (বন্দর, নারায়ণগঞ্জ) সংঘটিত হয় দুবার – মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে এবং ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে। নারায়ণগঞ্জ বন্দরের অন্তর্গত কলাগাছিয়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্রশিক্ষণ শিবির ছিল। এ খবর জানার পর পাকবাহিনী একদিন সকালে অতর্কিতে গ্রামবাসীদের ওপর হামলা চালায়। তারা নিরীহ লোকদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে এবং তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। – মুক্তিযোদ্ধারা এ সংবাদ শোনামাত্র পাকবাহিনীর ওপর গেরিলা আক্রমণ চালান। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। এ-যুদ্ধে বিএলএফ – বাহিনীর গ্রুপ কমান্ডার বন্দরের ধামগড় ইউনিয়নের সোনাছড়া গ্রামের আব্দুর রশীদের গ্রুপ, কলাগাছিয়ার সাহাবুদ্দীন খান, বন্দরের নুরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জের স্বপনসহ আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে একদিন সকাল ১০টার দিকে কলাগাছিয়ার আবুবকর সিদ্দিকের (আক্কা হাজী) বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সভা চলছিল। সভায় প্রায় দুশ মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। বন্দরের গ্রুপ কমান্ডার মো. সেলিমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবাদি বাজার ঘাঁটি থেকে পায়ে হেঁটে সভায় আসেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন বন্দরের নুরু ইসলাম, সিরাজ, মো. শফি উদ্দিন, শাহেন শাহ, আবু সিদ্দিক, আব্দুর রব, সিরাজুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, মো. হোসেন রোকন, সেরাজুল ইসলাম, কলাগাছিয়ার দীন ইসলাম বাদশা, সিদ্দিকুর রহমান, দীন মোহাম্মদ, ধামগড় ইউনিয়নের গোকুল দাসের বাগের মো. আব্দুল লতিফ প্রমুখ। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের কমল গ্রুপের ১০-১২ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা এ সভায় যোগ দেন।
আবুবকর সিদ্দিকের বাড়িটি ছিল শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে। হঠাৎ মুক্তিযোদ্ধারা দেখতে পান পাকসেনাদের তিনটি গানবোট তীরের দিকে ছুটে আসছে। মুক্তিযোদ্ধারা বুঝতে পেরেছিলেন পাকসেনারা তাঁদের আক্রমণ করবে। তাই তাঁরা দ্রুত পজিশন নেন। পাকসেনারা এসে আক্রমণ করলে তাঁরাও পাল্টা আক্রমণ চালান। উভয় পক্ষে প্রায় তিনঘণ্টা যুদ্ধ চলে। এমন সময় ভারতীয় সৈন্যরা বোমারু বিমান থেকে বোম্বিং করে গানবোট তিনটি ডুবিয়ে দেন। পাকসেনারা প্রাণ বাঁচানোর জন্য সাঁতরে তীরে উঠলে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি ও বেয়নেট চার্জ করেন। এতে অনেক পাকসেনা নিহত হয়। যারা সাঁতার জানত না তারা নদীতে ডুবে মারা যায়। [রীতা ভৌমিক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড