You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.08 | করমজা গণহত্যা (সাঁথিয়া, পাবনা) - সংগ্রামের নোটবুক

করমজা গণহত্যা (সাঁথিয়া, পাবনা)

করমজা গণহত্যা (সাঁথিয়া, পাবনা) সংঘটিত হয় ৮ই মে। এতে ১১ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার অন্তর্ভুক্ত একটি গ্রামের নাম করমজা। বেড়া থেকে সাঁথিয়ার দিকে যে রাস্তাটি চলে গেছে, সেই রাস্তা ধরে ২ কিলোমিটার এগুলেই রাস্তার দক্ষিণ দিকে করমজা গ্রাম। এ গ্রামের সঙ্গেই ঠাকুরবাড়ি। এই ঠাকুরবাড়ির আঙ্গিনার খেজুর গাছের ছায়ার নিচে ৮ জন মানুষকে গুলি ও বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করে মাটির নিচে পুঁতে রেখেছিল পাকবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকারের দল।
১৯৭১ সালের ৮ই মে করমজা এলাকার পাকবাহিনীর দোসর -রাজাকার বাহিনী পাকস্তানি সেনাসদস্যদের গ্রামে ডেকে আনে। তারা হানাদার বাহিনীকে গ্রামের মুক্তিযুদ্ধ সমর্থক মানুষজনের ঘরবাড়ি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দেখিয়ে দেয়। পাকবাহিনী করমজা গ্রামের মেগাঠাকুর বাড়ির সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, দ্বিরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, করুণ ভট্টাচার্য, শশীচরণ হালদার, শান্তি হালদার, সুবেন্দ্র চন্দ্র হালদার, কার্ত্তিক হালদার, আদু হালদার এই ৮ জনকে ধরে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যার পর প্রত্যেকের দেহে বেয়নেট চার্জ করে দেহকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতির ঐক্য বজায় ছিল। এহেন বর্বোরোচিত ঘটনা মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ভীষণভাবে আহত করে। গ্রামের ফকির মাহমুদ, হাবিবুর রহমান, জমিরউদ্দিন হানাদার বাহিনীর এই বর্বর কাজের প্রতিবাদ জানায়। একারণে তাদেরও হানাদারবাহিনী ও রাজাকাররা গুলি ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর প্রথম ৮টি লাশ মেগাঠাকুরের বাড়ির পাশে মাটির নিচে এবং কয়েকদিন পর অপর ৩ জনের লাশ আলাদা জায়গায় পুঁতে রাখে। ২০০১ সালে করমজা- মেগাঠাকুর বাড়ি এলাকার গণকবরগুলো খোড়া হয়। সেখানে পাওয়া যায় ঠাকুর পরিবারের ৮ জনের মাথার খুলি, হাড়গোড়। সাঁথিয়া থানার মালখানায় সংরক্ষণ করা হয়েছে এসব মাথার খুলি ও হাড়গোড়। তৎকালীন সাঁথিয়া থানার ওসি ফজলুল করিম উদ্ধারকৃত কঙ্কালের মাথার খুলি, চোয়াল, হাত, পা বিছিয়ে দেহ মিলিয়ে ৮ জনকে শনাক্ত করেন। এসব খুলি, হাড়গোড় ও কঙ্কাল দেখে এখনো করমজা গ্রামের মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের করুণ কাহিনি ছবির মতো ভেসে ওঠে। [আবু সাইয়িদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড