You dont have javascript enabled! Please enable it! কমলাপুর ও কলাগাছিয়া যুদ্ধ (মাদারীপুর সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

কমলাপুর ও কলাগাছিয়া যুদ্ধ

কমলাপুর ও কলাগাছিয়া যুদ্ধ (মাদারীপুর সদর) সংঘটিত হয় অক্টোবর মাসে। এতে কোনো পক্ষেরই তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটলে পাকসেনারা এলাকার শতাধিক লোককে হত্যা করে।
মাদারীপুর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের উপর্যুপরি গেরিলা আক্রমণে অক্টোবর মাসের শেষদিকে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসর রাজাকার ও আলবদর বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এরূপ পরিস্থিতিতে মাদারীপুর সদর থানার ঘটকচর ব্রিজের পাশে হাইস্কুলের একটি পাকা একতলা দালান ও গোডাউনে রাজাকারদের ক্যাম্প স্থাপিত হয়। অবাধ যাতায়াতের জন্য এ ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা শত্রুমুক্ত রাখা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একান্ত জরুরি ছিল। এজন্য মুক্তিযোদ্ধারা এ রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১লা নভেম্বর রাত ৮টায় আক্রমণ পরিচালিত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে বেকায়দায় পড়লেও রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করে। তাদের ধারণা ছিল মাদারীপুর ও টেকেরহাট ঘাঁটি থেকে পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকাররা সাহায্যে এগিয়ে আসবে। এ ভরসায় অবরুদ্ধ রাজাকাররা নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান অস্বীকার করে বাংকারে বসে পাল্টা গুলি ছোড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা স্কুল ভবনের এক পাশের দশ ইঞ্চি পুরু দেয়াল ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে গুলি করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্রাশ ফায়ারে ১০-১২ জনে রাজাকার নিহত হয়। অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বাকি ৮ জনকে ধরে ভোর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্পে ফিরে আসেন।
এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে দিনের আলো দেখা দেয়ার আগে পাকিস্তানি বাহিনী বড়ব্রিজ, কলাগাছিয়া ও সমাদ্দার এ তিনদিক থেকে একযোগে কমলাপুর ও কলাগাছিয়া গ্রামে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের ৪টি ক্যাম্পে আক্রমণ করে। মাদারীপুর ও টেকেরহাট উভয় ঘাঁটি থেকে আসা পাকিস্তানি সৈন্যরা আক্রমণে অংশ নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের খলিল বাহিনী-র মূল ক্যাম্প ছিল কমলাপুর স্কুলে। ভোরবেলা চৌহদ্দির কাছে নদীতে এক জেলে মাছ ধরছিল। আবছা অন্ধকারে একদল লোক দেখে সে ‘কারা যায়’ জিজ্ঞেস করামাত্র পাকিস্তানি সেনারা তাকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। এতে তার মৃত্যু হয়। গুলির শব্দে তসলিম আহমদের ক্যাম্প ও হারুন শরীফের ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা সতর্ক হন। তাঁরা পাকবাহিনী আক্রমণ করেছে বুঝতে পেরে দ্রুত নৌকা নিয়ে সকলে লখণ্ডা বিলের মধ্যে চলে যান। কৌশলে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ হতাহত না হলেও ক্যাম্প এলাকার শতাধিক গ্রামবাসীকে পাকিস্তানি সেনারা নির্মমভাবে হত্যা করে। এ ঘটনা বাহাদুরপুর-কলাগাছিয়া-চৌহদ্দি গণহত্যা হিসেবে পরিচিত। [বেনজীর আহম্মদ টিপু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড