করটিয়া যুদ্ধ
করটিয়া যুদ্ধ (টাঙ্গাইল সদর) সংঘটিত হয় ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। করটিয়া টাঙ্গাইল সদর উপজেলার অন্তর্গত এবং টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়ক (বর্তমান বাইপাস সড়ক) করটিয়া বাজার ও হাটকে পূর্ব-পশ্চিমে বিভক্ত করেছে। সড়কের পশ্চিম পাশে করটিয়া সা’দত কলেজ অবস্থিত। ৩রা এপ্রিল পাকবাহিনী টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজ ও করটিয়া সা’দত কলেজ ক্যাম্পাসে ক্যাম্প স্থাপন করে। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে সুভল্যা ব্রিজ অপারেশন শেষে কাদেরিয়া বাহিনী-র কোম্পানি কমান্ডার হাবিবুর রহমান, বীর বিক্রম- (জাহাজমারা হাবিব)এর নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ধল্লা ব্রিজ অপারেশন শেষে কোম্পানি কমান্ডার এ কে এম বায়েজিদ আলমের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা একটি ভুল সিগনাল পেয়ে টাঙ্গাইলের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। করটিয়া বাজারের পশ্চিম পাশে ব্রিজের নিকট আসতেই কমান্ডার হাবিবুর রহমান বাইনোকুলারের মাধ্যমে প্রায় পাঁচশত গজ দূরে একটি মসজিদের পাশে পাকিস্তানি সৈন্যদের অবস্থান দেখতে পান। এমতাবস্থায় কমান্ডার বায়েজিদের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা করটিয়া ব্রিজের পাশে অবস্থান নেন। অপরদিকে কমান্ডার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা করটিয়ার গরুহাটিতে অবস্থান নেন। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড গুলি বিনিময় হয়। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে একটি গ্রুপ খাল পার হয়ে কাশবনের মাঝখান দিয়ে ক্রলিং করে হাবিব কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান থেকে দক্ষিণ দিকে চলে যায়। অন্য গ্রুপটি সা’দত কলেজে গিয়ে ওঠে। পাকিস্তানি বাহিনী হাবিব কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে গোলাবর্ষণ করতে থাকে। প্রায় তিন ঘণ্টা গুলি বিনিময়ের পর অবস্থা বেগতিক দেখে মুক্তিযোদ্ধারা ক্রলিং করে পাশেই একটি বটগাছের আড়ালে চলে যান। এরপর তারা পিছু হটে করটিয়ার পাশে কাণ্ঠাপাড়া গ্রামে নিরাপদ আশ্রয় নেন।
এ ঘটনার পরে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই -আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা করটিয়া সা’দত কলেজে স্থাপিত পাকবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড গুলি বিনিময় হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে এক পর্যায়ে পাকবাহিনী পালিয়ে যায়। এ-যুদ্ধে শতাধিক রাজাকার আত্মসমর্পণ করে এবং করটিয়া হানাদারমুক্ত হয়।
[শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড