করতোয়া নদীর ওপর রেলব্রিজ অপারেশন (পার্বতীপুর, দিনাজপুর)
করতোয়া নদীর ওপর রেলব্রিজ অপারেশন (পার্বতীপুর, দিনাজপুর) পরিচালিত হয় অক্টোবর মাসে। এতে ব্রিজটি ধ্বংস হয়ে যায়।
দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার খোলাহাটি রেল স্টেশনের পূর্বে এক কিলোমিটার দূরত্বে শীর্ণ প্রবাহের নদী করতোয়া। এ নদীর ওপর দিয়ে রেল লাইন বদরগঞ্জ হয়ে রংপুরের দিকে চলে গেছে। নদীর ওপর ৩৮৮/৪ পিলারের কাছে করতোয়া রেল ব্রিজ। ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী ব্রিজটির অর্ধেক রংপুর, অর্ধেক দিনাজপুরে। পিলারের পূর্বদিকে রংপুর জেলার বদরগঞ্জের ট্যাক্সেরহাট এবং পশ্চিমে পার্বতীপুরের খোলাহাটির কুষ্টপুর বালাপাড়া। মুক্তিযুদ্ধের সময় রংপুরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্ট এবং বদরগঞ্জ ও পার্বতীপুরে ক্যাম্প ছিল। তারা রেলপথে খোলাহাটির করতোয়া রেল ব্রিজ ব্যবহার করে ট্রেনযোগে রংপুর-দিনাজপুর যাতায়াত করত। বদরগঞ্জ থেকে হঠাৎ অপারেশনে বের হয়ে তারা বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, গণহত্যা ও ধরপাকড় করত। অক্টোবর মাসে মুক্তিযোদ্ধারা রেলপথে পার্বতীপুরের সঙ্গে বদরগঞ্জের যোগাযোগ বন্ধ করার লক্ষ্যে করতোয়া ব্রিজটি ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন গ্রুপের সমন্বয়ে কমান্ডার মাহবুবার রহমান, আবুল কালাম আজাদ, মো. আলাউদ্দিন, আফজাল হোসেন, আবু বকর সিদ্দিক, আহমদ হোসেন, আজিজুল হক, খায়রুল আলমসহ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা করতোয়া ব্রিজ অপারেশনে অংশ নেন। তাঁরা ১০নং হরিরামপুরের গভীর জঙ্গলের শালবনে অবস্থান নিয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পায়ে হেঁটে ব্রিজের নিকট পৌছে এর চতুর্দিকে পজিশন নেন। ব্রিজে পাহারারত ৪-৫ জন রাজাকার-কে আটক করে ব্রিজের নিচে এক্সপ্লোসিভ বসিয়ে ব্রিজটি ধ্বংস করে দেন। ফলে রংপুর-বদরগঞ্জ থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর খোলাহাটি-পার্বতীপুরে যাওয়া-আসা বন্ধ হয়ে যায়। এ অপারেশনে মুক্তিবাহিনীর কোন ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড