You dont have javascript enabled! Please enable it!

কন্যামণ্ডল যুদ্ধ

কন্যামণ্ডল যুদ্ধ (গফরগাঁও, ময়মনসিংহ) সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে সংঘটিত হয়। পাকবাহিনীকে প্রতিহত করতে এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন কমান্ডার ইকবাল-ই-আলম কামাল। যুদ্ধের এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনী পিছু হটে এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ১০ জন নিরপরাধ মানুষ শহীদ হন। ইকবাল-ই-আলম কামাল কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধা রহিম ১১ই সেপ্টেম্বর এক বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে জানতে পারেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দত্তের বাজার মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প আক্রমণ করার জন্য অগ্রসর হচ্ছে। এ খবর ক্যাম্পে পৌঁছা মাত্র কমান্ডার ইকবাল-ই-আলম কামাল ও ফাইটিং কমান্ডার মঞ্জুর কাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁদের বাহিনীকে প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত করেন। কামাল ও মঞ্জুর কাদেরের নেতৃত্বে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার একটি দল দেড় কিলোমিটার দূরে কন্যামণ্ডল স্কুলের কাছে রাস্তার বাম পাশে অবস্থান নেয়। হানাদার বাহিনী আস্তে আস্তে মুক্তিযোদ্ধাদের রেঞ্জের মধ্যে চলে এলে মঞ্জুর কাদের ও কামাল ফায়ার ওপেন করেন। এতে ২/৩ জন পাকিস্তানি সৈন্য আহত হয়ে মাটিতে পড়ে কাতরাতে থাকে। বাকিরা দ্রুত রাস্তার দুপাশে পজিশন নেয়। দুপক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হতে থাকে। পাকবাহিনীর একটি গ্রুপ ক্রলিং করে স্কুলের কাছাকাছি এসে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ভারী অস্ত্র দিয়ে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করতে থাকে। সঙ্গে মর্টার শেল ছুড়তে শুরু করে। হঠাৎ হানাদার বাহিনীর গুলির আঘাতে বটগাছের নিচে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধা সহিদ মিয়া ও ইছব আলী শহীদ হন। অবস্থা বেগতিক দেখে কামাল ও মঞ্জুর কাদের মুক্তিযোদ্ধাদের দ্রুত পূর্বদিকে সরে যেতে নির্দেশ দেন। হানাদাররা কামাল ও মঞ্জুর কাদেরের পিছু নিলে তাঁরা লামকাইনের দিকে বাকশীর বন পাড়ি দিয়ে বাঘেরগাঁও গাজীবাড়িতে প্রবেশ করেন। বাড়ির এক বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি তাঁদেরকে ধানের ডুলিতে লুকাতে বলেন। কিন্তু মঞ্জুর কাদের সঙ্গী চান মিয়াকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী আখক্ষেতে আশ্রয় নেন। হানাদাররা বৃদ্ধের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান জানতে চায়। কিন্তু বৃদ্ধ কোনো উত্তর না দেয়ায় প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। হানাদার বাহিনী পুরো গ্রামে তল্লাশি চালিয়ে কয়েকটি বাড়িঘরে আগুন দেয় এবং গণহত্যা চালায়। হানাদারদের আখক্ষেতে তল্লাশিকালে মঞ্জুর কাদের সঙ্গী চান মিয়াকে নিয়ে হানাদার ক্যাপ্টেন জামসাদ খানকে গুলি করেন। ঘটনার আকস্মিকতায় তারা দিশা হারিয়ে ফেলে ও পিছু হটে। এ যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রাসিদ্দি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আকবর হোসেন (চান মিয়া)। কন্যামণ্ডল যুদ্ধ এবং গণহত্যায় ২ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ১০ জন নিরপরাধ মানুষ শহীদ হন। তারা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউসুফ আলী (কন্যামণ্ডল), মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলু মিয়া (কাগেরগাঁও), মো. আব্দুল মজিদ, মো. আব্দুর রশিদ, মো. আব্দুস সহিদ, মহর চাঁদ, মণিন্দ্র মোদক, মো. আব্দুল হাই, মো. আফাত, মো. মফিজ খান, মো. মোশারফ হোসেন ও মো. আলতো মিয়া। [নিপা জাহান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!