You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.10 | কচুয়াই গণহত্যা (পটিয়া, চট্টগ্রাম) - সংগ্রামের নোটবুক

কচুয়াই গণহত্যা

কচুয়াই গণহত্যা (পটিয়া, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় ১০ই ডিসেম্বর শুক্রবার। পাকবাহিনী ও রাজাকার-আলবদররা চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নে এ হত্যাণ্ড চালায়। এদিন ভোররাতে শাহজাহান ইসলামাবাদী (পিতা মওলনা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী)-র নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আরাকান সড়কের শ্রীমতি খাল ও কমলমুন্সির হাটের মধ্যবর্তী গিরি চৌধুরী বাজার সংলগ্ন ব্রিজটি ভেঙে বাজারস্থ আরাকান সড়কে এবং সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে পজিশন নেয়। দুপুর ১২টার দিকে দোহাজারীর দিক থেকে ৪টি গাড়িতে করে আসা পাকসেনা ও রাজাকার-আলবদরদের সঙ্গে তাঁদের ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করলেও এক পর্যায়ে পাকবাহিনীর আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে পশ্চাদপসরণ করেন। অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা গিরি চৌধুরী বাজারের পশ্চিম দিকে সরে যান। পাকবাহিনী, রাজাকার- ও আলবদররা তাঁদের ধাওয়া করলেও কাউকে হতাহত করতে পারেনি। এতে ক্রুদ্ধ হয়ে তারা কচুয়াই ইউনিয়নের শেখ মোহাম্মদ পাড়া এবং গিরি চৌধুরী বাজার এলাকার পশ্চিম পাড়া, পুরান বাড়ি, লক্ষ্মীপাথরের বাড়ি, রামগোবিন্দ বৈদ্যর বাড়ি, মহারাজ ভট্টাচার্যের বাড়ি, দাশপাড়া, ঘোষপাড়া, শিববাড়ি প্রভৃতি স্থানে গণহত্যা চালায়। তারা অনেকক্ষণ যাবৎ বর্বরতা ও তাণ্ডব চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা করে এবং লুটপাটের পর অনেক বাড়িঘরে আগুন দেয়। তারা কয়েকজন নারীকে ধর্ষণও করে। গিরি চৌধুরী বাজার এলাকার পুরান বাড়িতে হানাদারদের হাত থেকে ইজ্জত বাঁচানোর জন্য আরতি রাণী দে, তাঁর মা, ঠাকুরমা মনোরমা, দুই কাকি ডলি ও রাধিকা মুখে কালি মেখে একটি ঘরে লুকিয়ে ছিলেন। কিন্তু চারজন রাজাকার সেখানে প্রবেশ করে ডলি ও মনোরমাকে অস্ত্রের আঘাতে মাটিতে ফেলে দেয়। তারপর আরতি রাণী দে-কে নিকটস্থ শিশুবিন্দুর ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনার পর অপমান ও লজ্জায় আরতি রাণী নিজের ঘরে গিয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করেন। সেদিন কচুয়াই গণহত্যায় শহীদরা হলেন- নারায়ণ দে (পিতা অপূর্ব কৃষ্ণ দে, গিরি চৌধুরী বাজার), অমূল্য দে (পিতা শরৎচন্দ্র দে, ঐ), শিবরাম দে (পিতা মহেন্দ্ৰ দে, ঐ), জামিনী দাশ (পিতা রামগোবিন্দ দাশ, ঐ), বরদা দে (পিতা পেঠান চন্দ্ৰ দে, শিববাড়ি), ফরিদুল হক খান (পিতা আহমদ মিয়া খান, আজিমপুর), বদন্যা (পিতা মনু মিয়া, শেখ মোহাম্মদ পাড়া), আবদুস সত্তার (পিতা কমল মিয়া, ঐ), খাতুনী বেগম (স্বামী দুলা মিয়া, ঐ) এবং কামাল উদ্দিন (পিতা দুলা মিয়া, ঐ)। কচুয়াই গণহত্যায় জড়িত স্থানীয় রাজাকার-আলবদররা হলো— বজল আহমদ (কচুয়াই), আনু মিয়া (আজিমপুর), লেদু মিয়া (কচুয়াই), আবদুল করিম (কচুয়াই), সৈয়দ বৈদ্য (কচুয়াই), লেদা বাচা (কচুয়াই), রহিম বকসু (কচুয়াই), আবদুল মালেক (কচুয়াই), জমির উদ্দিন (আজিমপুর) প্রমুখ। [শামসুল আরেফীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড