You dont have javascript enabled! Please enable it!

কটকস্থল প্রতিরোধযুদ্ধ

কটকস্থল প্রতিরোধযুদ্ধ (গৌরনদী, বরিশাল) ২৫শে এপ্রিল সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এ-যুদ্ধে ৭ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ এর পর গৌরনদী উপজেলায় আবদুর রব সেরনিয়াবাত এমএনএ ও আব্দুল করিম সরদার এমপিএ-র নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম শুরু হয়। ৫ই মার্চ প্রথমে বাঁশের লাঠি দিয়ে গৌরনদী কলেজ মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর গৌরনদী কলেজ ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক এ উপজেলার মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীকে সড়ক পথে প্রতিরোধ করার পরিকল্পনা করতে থাকেন। ২৫শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকা থেকে সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে বরিশাল আক্রমণ করতে এগিয়ে আসতে থাকে। এদিন বেলা ১০টার দিকে লক্ষ্মণ দাস সার্কাসের মালিক অরুণ দাসের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধারা এ খবর জানতে পারেন। খবর পেয়ে আবদুল করিম সরদার এমপিএ-র নির্দেশে গৌরনদী কলেজ ক্যাম্প থেকে বেইজ কমান্ডার সৈয়দ আবুল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৩ জন এবং ডা. আ ন ম আবদুল হাকিম বাহরামের নেতৃত্বে ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে ভুরঘাটা অভিমুখে রওনা হন। মুক্তিযোদ্ধারা ৩টি সেকশনে বিভক্ত হয়ে কটকস্থলের সউদের খাল নামক স্থানে অবস্থান নেন। হানাদার বাহিনী ফরিদপুর-মাদারীপুর হয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার সউদের খাল ব্রিজের নিকট কটকস্থলে পৌঁছলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিরোধ করেন এবং উভয় পক্ষের মধ্যে মুখোমুখি যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর ভারী অস্ত্রের কাছে টিকতে না পারলেও প্রায় ৩ ঘণ্টা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হন। যুদ্ধে ৭ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবুল হাসেম (নাঠৈ), পরিমল মণ্ডল (চাঁদশী), সিপাহি আলাউদ্দিন সরদার (গৈলা) ও সিপাহি মোক্তার হোসেন (দেওপাড়া, বাটাজোড়) শহীদ হন। যুদ্ধের পর সহযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবুল হাসেম, পরিমল মণ্ডল ও সিপাহি আলাউদ্দিন সরদারের লাশ তাঁদের পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করেন। শহীদ সিপাহি মোক্তার হোসেনের লাশ বাটাজোড় গ্রামের বাড়িতে নেয়া সম্ভব না হওয়ায় উত্তর ধানডোবা গ্রামের ফকির বাড়িতে সমাহিত করা হয়।
কটকস্থল প্রতিরোধযুদ্ধে মো. আবুল কাসেম, সার্জেন্ট আবদুর রাজ্জাক চোকদার, সুবেদার গোলাম মোস্তফা, আনসার কমান্ডার শাহ সেকেন্দার, মৌজে আলী, তৈয়ব আলী হাওলাদার, আবদুল জব্বার তালুকদার, কাদের শিকদার, আব্দুস সাত্তার খন্দকার, আলতাফ হোসেন, সৈয়দ আবুল হাসেম, সৈয়দ অলিউল ইসলাম, সিপাহি মোক্তার হোসেন, সিপাহি আলাউদ্দিন সরদার ওরফে আলা বক্স, মোসলেম উদ্দিন, মুজিবুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, পরিমল মণ্ডল, নূর মোহাম্মদ গোমস্তা প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। এ প্রতিরোধযুদ্ধের পর হানাদার বাহিনী বরিশাল দখল করতে এগিয়ে যায় ও সন্ধ্যার দিকে শহরের দখল নেয় ৷ [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!