কটিয়াদী থানা সদর বালিকা বিদ্যালয় বধ্যভূমি
কটিয়াদী থানা সদর বালিকা বিদ্যালয় বধ্যভূমি (কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ) কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী থানা সদরস্থ বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত। যুদ্ধের সময় পাকবাহিনী ও রাজাকাররা এখানে অনেক লোককে নির্দয়ভাবে হত্যা করে। ২৭শে জুলাই পাকিস্তানি ঘাতকরা অশ্বিনী মিস্ত্রী (পিতা অধর মিস্ত্রী, পূর্বপাড়া; কাঠমিস্ত্রী), ৬০ বছর বয়সী ক্ষেত্রমোহন ঘোষ (পিতা জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, পশ্চিমপাড়া; চা-বিক্রেতা), সুরেশচন্দ্র নাথ (পূর্বপাড়া মনিহারি দোকানি), ৭০ বছর বয়স্ক বিদ্যাসুন্দর দাস (পিতা দিলীপ কুমার দাস; চা-মিষ্টির দোকানি), তাঁর পুত্র রক্ষিতচন্দ্র দাস (চা-মিষ্টির দোকানি)-সহ অজ্ঞাতনামা আরো ১৪-১৫ জনকে ধরে এনে এখানে গুলি করে হত্যা করে। তারা মুমুরদিয়া গ্রামের ক্ষুদ্র মনিহারি ব্যবসায়ী বিনোদ রায়কে আরো কয়েকজনসহ এখানে গুলি করে হত্যা করে।
মুমুরদিয়া গ্রামের আবদুর রশিদ ভূঁইয়া (পিতা মনির উদ্দিন ভূঁইয়া) ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে বাড়িতে আসেন। জুলাই মাসে স্থানীয় রাজাকার ও স্বাধীনতাবিরোধীদের প্ররোচনায় পাকিস্তানি সেনারা তাঁর বাড়িতে হানা দিয়ে তাঁকে ধরে কটিয়াদী সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এরপর কটিয়াদী থানার সম্মুখস্থ গাছের ডালে ঝুলিয়ে ঘাতকরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করে এবং লাশ বালিকা বিদ্যালয়ের সম্মুখস্থ ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলে দেয়।
২৫শে আগস্ট স্থানীয় শান্তি কমিটির নেতা ও রাজাকার কমান্ডার মেন্দি মিয়া কটিয়াদী বাজারে অবস্থিত পাকসেনাদের ক্যাম্প থেকে হানাদারদের একটি দলকে কটিয়াদী থানার সদর ইউনিয়নের বাগরাইট ও চারিপাড়া গ্রামে নিয়ে যায়। তারা বাগরাইটে এসে প্রথমে আছির উদ্দিন খলিফা (পিতা আব্বাস উদ্দিন মুন্সী) ও লাল মিয়া (পিতা আবদুল হাশিম, বেথৈর; বাগরাইট গ্রামে শ্বশুরালয়ে অবস্থান করছিলেন)-কে আটক করে। এরপর আবদুল মোতালিব মতু (পিতা ইসমাঈল, বাগরাইট), আবদুল খালেক (পিতা ইসমাঈল, বাগরাইট), আফাজ উদ্দিন (পিতা আছমত প্রধান, বাগরাইট), জায়েদুল হাজী (বাগরাইট), আবদুস সোবহান (বাগরাইট), লালু মিয়া (পিতা বিরামদ্দিন, চারিপাড়া) ও মেঘলাল সাহা মেঘু (বর্তমানে কটিয়াদী শহরের পূর্বপাড়া)-কে আটক করে। আটককৃত সকলকে থানা সদরের সাব রেজিস্ট্রি অফিস ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ব্রহ্মপুত্র নদের ঢালে দাঁড় করায় এবং পাকিস্তানি ঘাতকরা তাদের গুলি করে। এ-সময় জায়েদুল হাজী ও আবদুস সোবহান নদীর ঢালে গড়িয়ে পড়ে জীবন রক্ষা করেন। বাকি ৭জন নির্মমভাবে প্রাণ হারান। তাঁদের মৃতদেহগুলো গড়িয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে পড়ে। পরবর্তীকালে নিহতদের স্মরণে এখানে একটি স্মৃতিফলক স্থাপিত হয়েছে। [মো. রফিকুল হক আখন্দ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড