You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.27 | কদমতলা ব্রিজ যুদ্ধ (সাতক্ষীরা সদর উপজেলা) - সংগ্রামের নোটবুক

কদমতলা ব্রিজ যুদ্ধ

কদমতলা ব্রিজ যুদ্ধ (সাতক্ষীরা সদর উপজেলা) সংঘটিত হয় ২৭শে অক্টোবর এসডিপিও ক্যাপ্টেন মাহাবুব উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কদমতলা ব্রিজে পাকসেনা ও রাজাকার দের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন। যশোর-সাতক্ষীরা রোডে সাতক্ষীরা সদরস্থ কদমতলা ব্রিজটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সদরের তিন কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত প্রায় ১০০ ফিট লম্বা এ ব্রিজটি পাকবাহিনীর দখলে ছিল। তাদের ভয় ছিল- মুক্তিযোদ্ধারা যদি ব্রিজটি ধ্বংস করে দেয় তাহলে যশোর ও নাভারন থেকে তাদের রসদ আসা বন্ধ হয়ে যাবে। তাছাড়া সাতক্ষীরা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় যোগাযোগ বিপর্যয়ের কারণে তাদের কর্মকাণ্ডও বাধাগ্রস্ত হবে। ইতঃপূর্বে মুক্তিযোদ্ধারা আলীপুরের ভাড়ুখালি ব্রিজ ও কুলপোতা ব্রিজ দুটি ধ্বংস করে দেয়ার কারণে ঐ অঞ্চল তাঁদের দখলে চলে যায়। ফলে, কোনোমতেই পাকহানাদাররা কদমতলা ব্রিজের দখল ছাড়তে চায়নি। এজন্য তারা ব্রিজ-সংলগ্ন এলাকায় একটি অস্থায়ী ক্যাম্প নির্মাণ করে ব্রিজে টহলের ব্যবস্থা করে।
অন্যদিকে, এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা তাদের নিরাপত্তার জন্য কদমতলা ব্রিজটি ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী ঘটনার দিন ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা এসডিপিও ক্যাপ্টেন মাহাবুবের নেতৃত্বে ২টি রকেট লাঞ্চার, ৪টি এলএমজি, ২টি এসএলআর, এসএমজি এবং পর্যাপ্ত বিস্ফোরকসহ বাবুলিয়া গ্রামে চলে আসেন। ক্যাপ্টেন মাহাবুব তাঁদের ৬টি গ্রুপে ভাগ করে যার-যার কাজ বুঝিয়ে দেন। ব্রিজ ধ্বংসের মূল দায়িত্ব পড়ে সোনা মিয়া ও আবদুল্লাহ্র ওপর, যার নাম হয় ‘এ্যাকশন গ্রুপ’ ৷ সিদ্ধান্ত হয় ইপিআর সদস্য মওলা প্রথমে রকেট লাঞ্চার দিয়ে আক্রমণ শুরু করবেন। এর পরপরই অভিযানে অংশ নেবেন সোনা মিয়া ও আব্দুল্লাহ্র দল। অন্য দলগুলো বিভিন্ন পয়েন্টে থেকে তাঁদের সহায়তা করবে।
আকাশে চাঁদ ডোবার পর রাত আনুমানিক তিনটা নাগাদ মুক্তিযোদ্ধারা অপারেশন শুরু করেন। মওলা সুবিধামতো স্থানে রকেট লাঞ্চার বসিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অন্য দলগুলো ক্রলিং করে ব্রিজের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। কিন্তু অন্ধকারে লক্ষ্য ঠিক করতে না পেরে একটি দল ব্রিজের ওপর উঠে যায় এবং টহলরত পাকসেনা ও রাজাকার বাহিনীর নজরে পড়ে যায়। সঙ্গে-সঙ্গে হানাদাররা গুলিবর্ষণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত ক্রলিং করে ব্রিজের নিচে ও রাস্তার ঢালে আশ্রয় নেন।
এদিকে সোনা মিয়া রকেট লাঞ্চার ছোড়ার জন্য মওলাকে ইশারা করেন। তাঁর তিনটি ফায়ার ব্যর্থ হয়। চতুর্থ ফায়ারটি ছিল শেষ গোলা। এটি গর্জে ওঠার সঙ্গে-সঙ্গে অপরাপর দলের মুক্তিযোদ্ধারাও বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে গোলাবর্ষণ শুরু করেন। কিন্তু ততক্ষণে পাকসেনা ও রাজাকাররা সোনা মিয়া ও আব্দুল্লাহর দলকে লক্ষ করে আক্রমণ চালায়। নিরুপায় সোনা মিয়া দলের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখবর্তী পুকুরে নামার নির্দেশ দেন। এতেও তাঁরা পুরোপুরি নিরাপদ হতে পারেননি। পুকুর লক্ষ করে পাকসেনা ও রাজাকাররা আক্রমণ চালাতে থাকে। অতঃপর শুধু সাহসিকতা ও মনোবলের কারণে কৌশল অবলম্বন করে সোনা মিয়া, আব্দুল্লাহ্ ও তাঁদের দলের মুক্তিযোদ্ধারা খাল-বিল পার হয়ে লোকালয়ে আসতে সক্ষম হন। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সবাই কম-বেশি আহত হয়েছিলেন। যুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর ও ঘোনা ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা অংশগ্রহণ করেন। [মিজানুর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড