You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান

ওহিদুর রহমান (জন্ম ১৯৪৩) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৩ সালের জুন মাসে আত্রাই উপজেলার সাহাগোলা ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতার নাম এবাদুর রহমান, মাতার নাম ইয়াদুন্নেছা। তিনি আত্রাইয়ের ভবানীপুর জি এস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬১ সালে মেট্রিক, নওগাঁ বি এম সি সরকারি কলেজ থেকে ১৯৬৪ সালে এইচএসসি,
নওগাঁ সরকারি কলেজ থেকে ১৯৬৬ সালে বিএ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে এমএ পাস করেন।
ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন প্রতিবাদী। ১৯৬২ সালে কলেজ জীবন থেকে তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন-এর রাজনীতিতে জড়িত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। আন্ডারগ্রাউন্ড কমিউনিস্ট নেতা মতিন- আলাউদ্দিনের প্রভাবে তিনি চীনপন্থী কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে জড়িত হন। এমএ পাস করার পর তিনি প্রায় এক বছর আত্রাইয়ের ভবানীপুর জি এস উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এজন্য বয়জ্যেষ্ঠরা এখনো তাঁকে ওহিদুর মাস্টার বলে সম্বোধন করেন। ১৯৬৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করে তিনি পার্টির নির্দেশে আত্রাই চলে আসেন কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য। তিনি ১৯৬৯ সালে আত্রাইয়ের রায়পুর গ্রামে হিন্দুদের প্রায় ৪৫ বিঘা পরিত্যক্ত জমি দখলমুক্ত করার জন্য কৃষকদের সংগঠিত করে জোতদারের লাঠিয়াল বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়লাভ করেন এবং জমির ফসল গরিব কৃষকদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। কৃষক আন্দোলনে সাহসী ভূমিকার জন্য ওহিদুর রহমান কৃষকনেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্রাইসহ বৃহত্তর রাজশাহীর একটি বিশাল এলাকাজুড়ে ওহিদুর রহমানের অসামান্য অবদান রয়েছে। এ অঞ্চলে তিনি বামপন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্ব দেন। তাঁর অসামান্য দক্ষতা, অসীম সাহসিকতা এবং বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে বিভিন্ন দল ও মতের লোকজনের সমন্বয়ে আত্রাইয়ে গড়ে উঠেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের এক বিশাল বাহিনী, যা ওহিদুর বাহিনী – হিসেবে পরিচিত ছিল।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ওহিদুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা খালি হাতে আত্রাই থানা দখল, বিভিন্ন গ্রামের জোতদারদের বন্দুক সংগ্রহ এবং বিভিন্ন রাজাকার ক্যাম্প দখল করে অস্ত্রের মজুত গড়ে তোলেন। ভারতের প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র ছাড়া সাধারণ অস্ত্র দিয়েই পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যায় ওহিদুর রহমানের চৌকস দল। ওহিদুর রহমানের বীরত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জনসাধারণ তাঁর গ্রামের বাড়ির পাশে আত্রাই-নওগাঁ পাকা সড়কের মোড়ের নামকরণ করেছে ওহিদুরের মোড়। [ফরিদুল আলম পিন্টু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!