কংশেরকুল গণহত্যা
কংশেরকুল গণহত্যা (ভালুকা, ময়মনসিংহ) সংঘটিত হয় ১৭ই নভেম্বর। রাজাকারদের সহাযোগিতায় পাকহানাদার বাহিনীর দুটি দল এদিন কংশেরকুল, বিরুনিয়া ও কাইচান গ্রামে গণহত্যা চালায় এবং ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। শুধু কংশেরকুল গ্রামেই ৩০ জনের মতো মানুষ হত্যার শিকার হন। হানাদাররা অনেকের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
১৭ই নভেম্বর ভালুকা থানার বিরুনিয়া ইউনিয়নের কংশেরকুল গ্রামে রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা চালায়। একই দিন তারা বিরুনিয়া ও কাইচান গ্রামেও গণহত্যা চালায়। তারা তিনটি গ্রামের দুই শতাধিক বাড়িঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। ভালুকা ও গফরগাঁও থেকে হানাদার বাহিনীর দুটি দল একত্রিত হয়ে এ গণহত্যা চালায়।
রাজাকারদের সহযোগিতায় গফরগাঁও থেকে একদল পাকসেনা মারমুখী হয়ে মাহমুদপুরে এসে অপেক্ষা করতে থাকে। অপর দল ভালুকা থেকে ভাওয়ালিয়াবাজু-চান্দেরাটি হয়ে মাহমুদপুর এসে মিলিত হয়। দুই দল এক সঙ্গে মিলিত হয়ে প্রথমেই তারা কংশেরকুল গ্রামে প্রবেশ করে এবং কংশেরকুল উচ্চ বিদ্যালয় গুঁড়িয়ে দেয়। কারণ, এ বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল। তাছাড়া এ গ্রামের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা ছিল হিন্দু। পাকবাহিনী তীব্র প্রতিহিংসায় মেতে ওঠে। গ্রামে ঢুকে নির্বিচারে গুলি করে মানুষ মারতে থাকে। পাশাপাশি বাড়িঘরে লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করে। পাকসেনারা গণহত্যার পর রাজাকারদের সহায়তায় শহীদদের লাশগুলো টেনে-হিঁচড়ে সূতিয়া নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
কংশেরকুল গণহত্যায় ৩০ জনের মতো মানুষ শহীদ হন। তাদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে, তারা হলেন- নূরুল ইসলাম (পিতা হালিম উদ্দিন), শামছুদ্দিন (পিতা মোবারক হোসেন), সিরাজ উদ্দিন (পিতা আবেদ আলী), ওমর উদ্দিন (পিতা খলিল মুন্সী), আক্কাস আলী (পিতা ইয়াকুব আলী), হাবিবুল্লাহ (পিতা ছাবেদ আলী), জিগেন্দ্ৰ আচার্য (পিতা রাসমোহন আচার্য), আসকর আলী (পিতা ইন্তাজ আলী), গজেন্দ্র বর্মণ (পিতা ব্রজনাথ বর্মণ) ও ব্রজেন্দ্র বর্মণ (পিতা বিন্দার বাপ)। [মো. শফিকুল ইসলাম কাদির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড