কংস নদীর যুদ্ধ
কংস নদীর যুদ্ধ (নেত্রকোনা সদর) সংঘটিত হয় ৭ই জুলাই। পাকবাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের এ-যুদ্ধে হানাদাররা পরাজিত ও বিপর্যস্ত হয়। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন আবু সিদ্দিক আহমেদ।
ঘটনার দিন সকালে মুক্তিবাহিনী গোপন সূত্রে খবর পায় যে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি দল কিছু রাজাকারসহ সদর থানার বাঁশটি গ্রামে আসছে। এ সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা আবু সিদ্দিক আহমেদের একটি দল দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কংস নদীর তীরে অবস্থান নেয়। ওপার থেকে নৌকাযোগে পাকিস্তানি হানাদাররা তাদের সহযোগীদের নিয়ে এদিকে আসছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ করেন। এক সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্যভেদী গুলিতে পাকিস্তানি হানাদারদের বহনকারী নৌকাটি ঝাঝরা হয়ে নদীতে ডুবে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের উপর্যুপরি গুলিবর্ষণে শত্রুপক্ষের বেশ কয়েকজন ঘটনাস্থলে নিহত হয়। বাকিরা সাঁতরে ওপারে উঠে আত্মরক্ষার্থে দৌড়াতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ধাওয়া করেন। এক পর্যায়ে ৭ জন ধরা পড়ে। তাদের মধ্যে নেত্রকোনা সদর থানার দারোগা আব্দুর রশীদ, আনসার সদস্য লাল মিয়া ও আব্দুল মালেক এবং অপর এক দালাল ছিল। ধৃত ৭ জনকে মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের রংড়া ক্যাম্পে ক্যাপ্টেন চৌহানের কাছে পাঠিয়ে দেন।
পাকবাহিনী ও রাজাকারদের পরাস্ত হওয়ার সংবাদ পেয়ে নেত্রকোনা থেকে পাক হানাদারদের একটি প্লাটুন দুপুরে কংস নদীর বড়ওয়ারী ফেরিঘাটে হাজির হয়। অনেক চেষ্টায় পাকবাহিনীর প্লাটুনটি নদী পাড়ি দিয়ে এপারে ওঠে। এ-সময় মুক্তিযোদ্ধারা আত্মরক্ষামূলক আক্রমণের কৌশল অবলম্বন করেন। মুক্তিযোদ্ধারা অপেক্ষাকৃত কম গুলি বর্ষণ করে সময় ক্ষেপণ করার কৌশল নেন। তাঁদের এ কৌশলের কারণে পাকিস্তানিরা বেলা ৩টা থেকে এক ঘণ্টায় মাত্র এক মাইল পথ এগুতে সক্ষম হয়। সময় ক্ষেপণের ফলে রাত হয়ে গেলে বড় বিপদের আশংকায় পাকিস্তানি হানাদাররা পেছনে সরতে শুরু করে। সন্ধ্যার পূর্বে কংস নদী পাড়ি দিয়ে তারা নেত্রকোনা শহরে পৌঁছে আত্মরক্ষা করে। এ-যুদ্ধের সাফল্য এলাকার সাধারণ মানুষের মনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আস্থা ও তাদের মনোবল বৃদ্ধি করে। [আলী আহাম্মদ খান আইয়োব]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড