You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.10 | ওটতলীর যুদ্ধ (ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

ওটতলীর যুদ্ধ

ওটতলীর যুদ্ধ (ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর) সংঘটিত হয় ১০ই আগস্ট। এতে ৩ জন পাকসেনা নিহত ও ৪-৫ জন আহত হয়। ১০ই আগস্ট মঙ্গলবার চাঁদপুর কলেজের ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল মমিন খান মাখন (বিএলএফ মহকুমা কমান্ডার) আগের দিন ভারত থেকে একটি বিএলএফ গ্রুপ নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে আসেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সৈয়দ আবেদ মনসুর (চাঁদপুর থানা কমান্ডার)-সহ অন্যান্য বিএলএফ কমান্ডার ও সদস্যগণ। তাঁদের সঙ্গে রাশিয়ান এলএমজি, এসএলআর- সহ প্রচুর অস্ত্র ও গোলা-বারুদ ছিল। তাঁরা পাইকপাড়া হাইস্কুলে অবস্থান নেন। তখন পাঠান বাহিনী র একটি প্লাটুন ওটতলী খেয়াঘাটে অবস্থান করছিল। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বি এম কলিমউল্যা ভূঁইয়া। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের খালের পাড়ে পজিশনে রেখে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে একজন কুখ্যাত দালালকে ধরার জন্য চলে যান। এদিকে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি গ্রুপ গোপনে অনুসরণ করে তাঁকে ঘিরে ফেলে। উপায়ান্তর না দেখে তিনি কাপড় খুলে গামছা পরে শরীরে কাদা মেখে পাশের ধানক্ষেতে কর্মরত ৪-৫ জন কৃষকের সঙ্গে মিশে যান। বাকিরা দ্রুত সরে পড়েন। পাকিস্তানি বাহিনী তাঁদের না পেয়ে চলে যায়। কিন্তু ভূঁইয়া দ্রুত অন্যদের খবর দিয়ে এনে গেরিলা কায়দায় পাকিস্তানি বাহিনীকে আক্রমণ করেন। পাকসেনারা সংখ্যায় বেশি হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে মার খেয়ে তারা নৌকায় করে দ্রুত মুন্সিরহাট হয়ে হাজিগঞ্জে চলে যায়। এখানে ৩ জন পাকসেনা নিহত ও ৪-৫ জন আহত হয়। এদিকে জহিরুল হক পাঠান কমান্ডার কলিমউল্যা ভূঁইয়াকে জরুরি খবর দেন যে, পাকবাহিনীর একটি দল রাজাকার-দের নিয়ে আস্ট্রা স্কুলে অবস্থান নিয়েছে। তারা পাইকপাড়া হয়ে কড়ইতলী বাজারে আসবে। এ খবর পেয়ে ভূঁইয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে দ্রুত কাসারার ভেতর দিয়ে পাইকপাড়া চলে আসেন। জহিরুল হক পাঠান বিএলএফ গ্রুপের পাশাপাশি একটি প্লাটুন কাসারায়, আর একটি গ্রুপ সাইচাখালী হাবিলদার রশিদের নেতৃত্বে প্রস্তুত রাখেন। পাকবাহিনী ফায়ার করতে-করতে এগিয়ে আসে। পাকবাহিনী টার্গেটের মধ্যে এলে পাঠানের নির্দেশে বিএলএফ ও পাঠান বাহিনী তাদের প্রচণ্ডভাবে আক্রমণ করে। ফলে আত্মরক্ষার্থে পাকবাহিনী রাস্তার বাম পাশে শুকনা খালের মধ্যে নেমে যায়। এরপর তারা ক্রলিং করে এবং গুলি ছুড়তে-ছুড়তে দ্রুত রূপসা রাস্তা ধরে পালিয়ে যায়। যুদ্ধের পর জনগণ একটি চাইনিজ রাইফেল ও বুলেট কুড়িয়ে পায়। [দেলোয়ার হোসেন খান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড