You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক ওয়াজেদ আলী মিয়া - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক ওয়াজেদ আলী মিয়া

ওয়াজেদ আলী মিয়া, বীর প্রতীক (১৯৪৪-২০১২) অনারারি ক্যাপ্টেন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৪ সালের ৩১শে আগস্ট মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার মোল্লাকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম তাহের উদ্দিন মাতব্বর এবং মাতার নাম ছোট বিবি। দুই ভাইয়ের মধ্যে ওয়াজেদ আলী মিয়া ছিলেন কনিষ্ঠ। তিনি শিবচর উপজেলার রাজারচর হাইস্কুলে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন।
ওয়াজেদ আলী মিয়া ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে তিনি জয়দেবপুর সেনানিবাসে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে হাবিলদার পদে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মেজর কে এম সফিউল্লাহ, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আশুগঞ্জ, তেলিয়াপাড়া, ভৈরব, হরীপুর, চান্দুরা, নরসিংদী, মুকন্দপুর প্রভৃতি সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ‘এস’ ফোর্সের অধীনে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে লেফটেন্যান্ট হেলাল মোর্শেদ খানের ‘ডি’ কোম্পানির একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এসব যুদ্ধে তিনি অংশ নেন। তিনি বিস্ফোরক দলের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
এক অপারেশনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার মুকুন্দপুরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভর্তি ট্রেনের ইঞ্জিন ও কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত করে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দেন। এটি সংঘটিত হয় ১৩ই সেপ্টেম্বর। ভারত সীমান্তে অবস্থানকালে মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট গোপনে সংবাদ আসে যে, ১৩ই সেপ্টেম্বর সকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এক কোম্পানি সৈন্য ট্রেনযোগে আখাউড়া থেকে মুকুন্দপুর হয়ে হরষপুরে যাবে। এ সংবাদের ভিত্তিতে ওয়াজেদ আলী মিয়ার নেতৃত্বে বিস্ফোরক দলের মুক্তিযোদ্ধারা ১২ই সেপ্টেম্বর রাতে ভারত সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মুকুন্দপুর রেল লাইনের নিচে এন্টিট্যাংক মাইন পুঁতে তাতে বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ দিয়ে প্রায় তিনশ গজ দূরে টেনে নিয়ে সেখানে অপেক্ষা করতে থাকেন। সকাল বেলা রেলের ইঞ্জিনটি ধীর গতিতে মাইন পুঁতে রাখা স্থান অতিক্রমকালে রিমোট কন্ট্রোলের সুইচ টিপে মুহূর্তেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতের অস্ত্র একযোগে গর্জে ওঠে। মাইন বিস্ফোরণে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ বেশ কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ অপারেশনে ২ জন অফিসারসহ ২৭ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক হাবিলদার ওয়াজেদ আলী মিয়াকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি অনারারি ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পান এবং ১৯৯১ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম সামসুন নাহার। এ দম্পতি ২ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক-জননী। বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদ আলী মিয়া, বীর প্রতীক ২০১২ সালের ১লা জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড