You dont have javascript enabled! Please enable it!

ওয়ারলেস যুদ্ধ

ওয়ারলেস যুদ্ধ (অষ্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ) সংঘটিত হয় ২৮শে নভেম্বর। অষ্টগ্রাম থানা সদরের কলেজ রোড বনিকপাড়ায় অবস্থিত ওয়ারলেস ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করলে তাঁদের সঙ্গে রাজাকার ও আলবদরদের এ- যুদ্ধ হয়। ভোর ৪টা থেকে বিকেল পর্যন্ত যুদ্ধ চলে।
হানাদার বাহিনী অষ্টগ্রামে প্রবেশের পর মুক্তিযোদ্ধারা পরপর দুবার তাদের ওপর গেরিলা আক্রমণ করেন। হাওড় এবং নদীবেষ্টিত অষ্টগ্রামে অতর্কিত আক্রমণ পরিচালনা করা সহজসাধ্য ছিল না। আশপাশের প্রত্যেক থানাই তখন পাকসেনাদের দখলে ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের এসব চেষ্টা সফল না হওয়ায় অষ্টগ্রামের জনসাধারণের ওপর নানা নির্যাতন নেমে আসে। স্থানীয় দালাল ও রাজাকার-দের সহযোগিতায় হানাদার বাহিনী হত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগে মেতে ওঠে।
অষ্টগ্রামকে শত্রুমুক্ত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা ২৭শে নভেম্বর সংগঠিত হন। পরিকল্পনা অনুযায়ী অষ্টগ্রামের মো. ফিরোজ, নিকলীর মতিউর রহমান (পরে বীর বিক্রম), ইটনার হাবিবুর রহমান, ঘাগড়ার জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল্লাপুরের বজলুর রহমান, কিশোরগঞ্জের নাজিম কবীর, আজমেরীর বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক ফজলুর রহমান চৌধুরী, নিকলীর শাহাবুদ্দীন (শহীদ), রিয়াদুল ইসলাম খান বাচ্চু, আব্দুর রহমান, রওশন আলী, হালিম দাদ খান-সহ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারলেস ক্যাম্প আক্রমণে অংশগ্রহণ করেন। পাকসেনারা সে সময় আলবদর–রাজাকারদের হাতে ক্যাম্পের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে কিশোরগঞ্জ চলে গিয়েছিল। ২৮শে নভেম্বর ভোর ৪টা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ৬টি এলএমজি ও একটি রকেট লঞ্চার নিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। তাঁরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আক্রমণ চালান। শত্রুরা ক্যাম্পের বাংকার থেকে গুলি ছুড়তে থাকে। সকাল ৯টার সময় মতিউর রহমান গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দীন মারাত্মকভাবে আহত হন। শত্রুদের ছোড়া গুলি শাহাবুদ্দীনের কনুই ভেদ করে হাতের তালু দিয়ে বের হয়ে যায়। মো. ফিরোজসহ কয়েকজন সহযোদ্ধা তাঁকে মাইল তিনেক দূরের ভাতশালা গ্রামের পাশে নদীতে অপেক্ষারত ডাক্তারের নৌকায় নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা দেবার পরও তাঁর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। ফলে এক সময় এ অকুতোভয় মুক্তিসেনা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গণি ও আব্দুর রহমান আহত হন।
সহযোদ্ধাদের আহত এবং নিহত হওয়ার সংবাদ পেয়েও মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ চালিয়ে যান। ২৮শে নভেম্বর বিকেল পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। নিজেদের রক্ষার শেষ চেষ্টা হিসেবে রাজাকার ও আলবদররা গুজবের আশ্রয় নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ না থামালে পাকিস্তানি বিমান কর্তৃক বোমা হামলা চালিয়ে পুরো এলাকা ধ্বংস করে দেয়ার গুজবে স্থানীয় জনগণ ভীত হয়ে পড়ে। জনতার অনুরোধে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধবিরতি দিলে রাজাকার ও আলবদররা পালিয়ে যায়। এ-যুদ্ধের পর অষ্টগ্রাম শত্রুমুক্ত হয়। ১লা ডিসেম্বর অষ্টগ্রামকে আনুষ্ঠানিকভাবে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করে বিজয় পতাকা ওড়ানো হয়। সাধারণ মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ে। [ফারজানা আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!