বীর বিক্রম এস আই এম নুরুন্নবী খান
এস আই এম নুরুন্নবী খান, বীর বিক্রম (জন্ম ১৯৪৩) লেফটেন্যানন্ট, তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গলের ডেল্টা কোম্পানির অধিনকায়ক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৩ সালের ১৪ই অক্টোবর লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীধরপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম হাজী হাবিবউল্লাহ খান ও মাতার নাম শামছুন্নাহার বেগম। তিনি ১৯৭০ সালে ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। এরপর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে যোগদান করেন। সেখান থেকে ২৮শে মার্চ ১৯৭১ পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রথমে কর্নেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তৃতীয় বেঙ্গলের ডেল্টা কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত হন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি যশোর, পশ্চিম দিনাজপুরের বালুরঘাট, গারো পাহাড়ের তেলঢালা, ময়মনসিংহের বাহাদুরাবাদ ঘাট, রংপুর জেলার রৌমারী, চিলমারী, কুড়িগ্রাম, সিলেট জেলার ছাতক, গোয়াইনঘাট, রাধানগর, ছোটখেল, লামাকাজিঘাট ইত্যাদি স্থানে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধ করেন। এছাড়াও তিনি দিনাজপুর শহর, হিলি ও নওগাঁতে পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানের ওপর কয়েকটি সফল অভিযান পরিচালনা করেন। ৩১শে জুলাই লে. নুরুন্নবীর নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা বাহাদুরাবাদ ঘাটে পাকসেনাদের অবস্থানে আক্রমণ চালিয়ে ৩টি পাকিস্তানি বার্জ অকেজো ও ২টি যাত্রীবাহী বগিতে বিশ্রামরত বেশকিছু পাকিস্তানি সেনাকে হতাহত করেন। এরপর তাঁরা দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন সংলগ্ন পাকহানাদারদের অবস্থানে সফল হামলা চালান। সিলেটের ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে পাকিস্তানি হানাদারদের ঘাঁটি আক্রমণে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা দলের সঙ্গে লে. নুরুন্নবীর নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারাও অংশগ্রহণ করেন। পাকসেনাদের মূল ঘাঁটি ছিল ছোটখেল গ্রামে। অনেক লোকক্ষয় ও রক্তপাতের বিনিময়ে ভারতীয় গুর্খা রেজিমেন্টের সেনারা ছোটখেল দখলে নিতে সক্ষম হলেও তা তারা ধরে রাখতে পারেননি। পাকসেনাদের পুনরাক্রমণে তাঁরা পিছিয়ে আসেন। এরপর ভারতীয় জেনারেল সিল ছোটখেল আক্রমণ ও দখলের দায়িত্ব তৃতীয় বেঙ্গলের ওপর অর্পণ করেন। সহযোদ্ধাদের উৎসাহিত করার জন্য মেজর শাফায়াত জামিল, বীর বিক্রম স্বয়ং ছোটখেল পুনর্দখলের অভিযানে অংশ নেন। এখানকার যোদ্ধারা সবাই ছিলেন তৃতীয় বেঙ্গলের ডেল্টা কোম্পানির। মাত্র বিশ মিনিটের যুদ্ধে ছোটখেল মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। এখানে মেজর শাফায়াত জামিল শত্রুদের ছোড়া গুলিতে আহত হন। এদিকে লে. নবী অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যান। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী-র যৌথ আক্রমণে টিকতে না পেরে পাকসেনারা রাধানগর ছেড়ে গোয়াইনঘাটে আশ্রয় নেয়। ১৭ই ডিসেম্বর সিলেটে পাকসেনারা আত্মসমর্পণ করে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, সাহস ও দেশপ্রেমের পরিচয় দেয়ায় লে. নবীকে বাংলাদেশ সরকার ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে একাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি ৩ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম সুলতানা রাজিয়া। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড