You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক এস এম নূরুল হক

এস এম নূরুল হক, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৮) বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিমান বাহিনীর সৈনিক। তিনি ১৯৪৮ সালের ১লা অক্টোবর কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার মুক্তারকুল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম ছমুদা খাতুন এবং পিতার নাম শফিকুল হক মাস্টার। তিনি তাঁর গ্রামে ও কক্সবাজারে অধ্যয়ন করেন। পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে চাকরির মাধ্যমে এস এম নূরুল হকের কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৭১ সালে তিনি পশ্চিমপাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশেরসারগোদা শহরের বিমান ঘাঁটিতে কর্মরত কর্মরত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি জুন মাসে পাঞ্জাব থেকে পালিয়ে দেশে আসেন। কিছুদিন দেশে থেকে তিনি ভারতে যান। ১ নম্বর সেক্টরে যোগ দিয়ে তিনি প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে পাকবাহিনীকে আকাশ পথে আক্রমণ করার জন্য বাংলাদেশের বিমান বাহিনী গঠিত হয়। সেপ্টেম্বর মাসে এস এম নূরুল হক বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। বিমানের ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তিনি বেশ কয়েকটি আক্রমণে অংশ নেন। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইস্টার্ন অয়েল শোধনাগারের ওপর বিমান থেকে বোমা আক্রমণে। তিনি প্রচণ্ড সাহসিকতার পরিচয় দেন। ১লা ডিসেম্বর এ আক্রমণ পরিচালিত হয়। পাকিস্তানিদের কাছে পতেঙ্গা = ইস্টার্ন অয়েল শোধনাগার ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই)। এখানে তাদের সার্বক্ষণিক পাহারা ছিল। চট্টগ্রামে পাকবাহিনীকে বিপর্যস্ত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা এ তেল শোধনাগার আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর বিমান ঘাঁটি থেকে এ আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়। অন্য দুজন বৈমানিকের সঙ্গে এস এম নূরুল হক এতে যোগ দেন। গভীর রাতে তাঁরা পতেঙ্গায় এসে শোধনাগারে বোমা নিক্ষেপ করেন। নিদ্রারত থাকায় পাকসেনারা এ আক্রমণ সম্পর্কে কিছুই বুঝতে পারেনি। এস এম নূরুল হকের নিক্ষিপ্ত বোমায় তেল শোধনাগারে আগুন ধরে যায়। পাকসেনারা পাল্টা আক্রমণ করলেও তাঁরা নিরাপদে ফিরে আসতে সক্ষম হন। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এ আক্রমণ সফল হওয়ায় চট্টগ্রামে পাকসেনাদের মধ্যে অসহায়ত্ব দেখা দেয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার এস এম নূরুল হককে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭৭ সালে তিনি বিমান বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ৩ কন্যা ও ৫ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম জাহান আরা বেগম। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!