You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক এস কে আজিজুর রহমান

এস কে আজিজুর রহমান, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪২) বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিমান বাহিনীর সৈনিক। তিনি শেখ আজিজুর রহমান নামেও পরিচিত। তিনি ১৯৪২ সালের ৯ই জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার ডুমাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ আবদুল হাকিম এবং মাতার নাম জোহরা খাতুন। মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার রায়চরণ হাইস্কুল থেকে ১৯৫৯ সালে তিনি এসএসসি
পাস করেন।
এস কে আজিজুর রহমান কর্মজীবনের শুরুতে পাকিস্তান পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকরি করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে কর্মরত ছিলেন। মার্চে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি ছুটি নিয়ে দেশে আসেন। ৭ই মার্চ তিনি ঢাকায় পৌঁছেন। ২৫শে মার্চ পাকবাহিনী গণহত্যা শুরু করলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং নিজের গ্রামে গিয়ে ছাত্র-যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেন। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। কামারখালী কলেজ মাঠে তাঁরা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করে দেশী অস্ত্র ও ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কয়েকটি ব্যাচে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেন। কিন্তু পাকসেনারা ফরিদপুরে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলে তাঁরা প্রশিক্ষিত ছাত্র-যুবকদের নিয়ে জুলাই মাসে ভারতে যান। সেখানে গিয়ে আজিজুর রহমান ৮ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। তিনি এ সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টরে ক্যাপ্টেন খন্দকার নাজমুল হুদার অধীস্থ হন এবং তাঁর অধীনে তিনি বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নেন তিনি মাগুরা জেলার শালিখা থানার আড়পাড়ায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লাড়াই করেন। সেপ্টেম্বর মাসে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নির্দেশে বয়রা থেকে গোপালগঞ্জ যাওয়ার পথে আড়পাড়ায় তাঁরা পাকসেনা ও রাজাকারদের একটি বড় দলের মুখোমুখি হলে এখানে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এখানে ১৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। ১৬ই ডিসেম্বরের পরও কাশিয়ানী থানার ভাটিয়াপাড়ায় পাকসেনা ও রাজাকাররা অবস্থান করলে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালিত হয়। এ আক্রমণে এস কে আজিজুর রহমান অংশ নেন ও বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার এস কে আজিজুর রহমানকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে তিনি ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এ এসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮০ সালে তিনি টিসিবি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি দীর্ঘকাল কুয়েতে চাকরি করেন এবং ২০০৮ সালে দেশে ফিরে আসেন। তিনি ২ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম ফিরোজা বেগম। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড