You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক এম মিজানুর রহমান

এম মিজানুর রহমান, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৬) মুক্তিযুদ্ধকালে ১ম বেঙ্গল ওয়ার প্রশিক্ষণ কোর্সে কমিশনপ্রাপ্ত, ১১নং সেক্টরের অধীন মহেন্দ্রগঞ্জ সাব-সেক্টরের গ্রুপ কমান্ডার ও বিখ্যাত কামালপুর যুদ্ধের বীর সেনানী। তিনি ১৯৪৬ সালের ১লা নভেম্বর ঢাকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. মজিবুর রহমান এবং মাতার নাম মোসা. সুফিয়া খাতুন। ১৯৭১ সালে এম মিজানুর রহমান ঢাকায় আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। তিনি ভারতে গিয়ে ২৫শে জুন থেকে শুরু হওয়া ফার্স্ট বেঙ্গল ওয়ার কোর্সে অংশ নিয়ে সফলভাবে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে কমিশনপ্রাপ্ত হন। অক্টোবরের শেষদিকে তিনি ১১নং সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জ সাব-সেক্টরে যোগ দেন। কামালপুর যুদ্ধ ছিল তাঁর জীবনে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা। এ-যুদ্ধে তিনি ছিলেন একটি মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপের কমান্ডার। জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুরে পাকহানাদার বাহিনীর অত্যন্ত শক্তিশালী একটি ঘাঁটি ছিল। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের একাধিকবার ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। বারবার চেষ্টা করেও মুক্তিযোদ্ধারা এ ঘাঁটির পতন ঘটাতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। ১৪ই নভেম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু তাহেরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা এখানকার পাকিস্তানি দুর্ভেদ্য ঘাঁটির প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে পাকসেনাদের প্রতিরক্ষাব্যূহের ভেতরে ঢুকে পড়েন। অনেক মুক্তিযোদ্ধা মাইন ও শত্রুর গুলির আঘাতে হতাহত হন। তা সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন বেপরোয়া ও অপ্রতিরোধ্য। হঠাৎ পাকিস্তানি সেনাদের নিক্ষিপ্ত একটি গোলা এসে মেজর তাহেরের পায়ে আঘাত হানে। তাঁর একটি পা দেহ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দ্রুত তাঁকে চিকিৎসার জন্য ভারতের গৌহাটি হাসপাতালে নেয়া হয়। তাঁর আহত হওয়ার ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধারা সাময়িকভাবে হলেও বিভ্রান্ত ও হতাশ হয়ে পড়েন। এ সংকটময় মুহূর্তে সাহসী ও দৃঢ় ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসেন কমান্ডার এম মিজানুর রহমান। তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি ঘুরে দাঁড়ান। ব্যাপক গোলাবর্ষণের মধ্যে তিনি হানাদারদের প্রতিরক্ষা লাইনের দিকে এগোতে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযান এ যাত্রা ব্যর্থ হয় বটে, কিন্তু পাকসেনাদের ওপর তাদের আঘাত ছিল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। পাকিস্তানি সেনাদের ক্ষয়ক্ষতিও ছিল ব্যাপক।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীর মুক্তিযোদ্ধা এম মিজানুর রহমানকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি কিছুকাল সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন এবং মেজর পদে উন্নীত হন। এরপর তিনি ব্যাংকের চাকরিতে ফিরে যান। তিনি ৩ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম নীনা খান। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!