You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর উত্তম এরশাদ আলী - সংগ্রামের নোটবুক

বীর উত্তম এরশাদ আলী

এরশাদ আলী, বীর উত্তম (১৯৩৫-১৯৭১) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৩৫ সালে নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আলী মিয়া এবং মাতার নাম অসমতের নেছা। তিনি এক কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম নূরুন নেছা।
এরশাদ আলী মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। এরপর ১৯৫৯ সালে তিনি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এ যোগ দেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে এরশাদ আলী ইপিআর-এর দিনাজপুর সেক্টরের রংপুর উইং-এ কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ব্যাপক গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা ঐ রাতেই আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত রংপুরহয়ে হেডকোয়ার্টার্সে ইপিআরবাঙালিসদস্যদের ওপর আক্রমণ করে। তাঁর সহযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ চালাতে থাকেন। ২৬শে মার্চ বিকেল পর্যন্ত যুদ্ধ করে এরশাদ আলী ইপিআর ক্যাম্প থেকে এরশাদ আলী বের হয়ে সহযোদ্ধাসহ তিস্তা রেল সেতুর কুড়িগ্রাম প্রান্তে অবস্থান নেন। এখানে তাঁদের সঙ্গে লালমনিরহাট, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম ও কুড়িগ্রাম থেকে আসা ইপিআর, পুলিশ, আনসার ও ছাত্র-জনতা যোগ দেন। ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান সুদৃঢ় হয়। ৩১শে মার্চ রংপুর সেনানিবাস থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৬ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স কাউনিয়া আসে। তারা ১লা এপ্রিল কাউনিয়া থেকে ট্রেনে করে তিস্তা সেতু অভিমুখে যাত্রা করে। খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তিস্তা সেতুর কুড়িগ্রাম প্রান্তে ট্রেন লাইনের স্লিপার খুলে তার ওপর গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখেন। এদিকে এরশাদ আলী ও তাঁর সহযোদ্ধারা প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের অপেক্ষায় থাকেন। পাকিস্তানি সৈন্য বহনকারী ট্রেনটি মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রের আওতায় আসামাত্র তাঁরা একযোগে পাকসেনাদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করেন। পাকবাহিনীও পাল্টা আক্রমণ চালায়। উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে ক্যাপ্টেন এজাজ মোস্তফাসহ ১৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য এবং কাউনিয়া থানার ওসি নিহত হয়। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে রংপুর সেনানিবাস থেকে বিপুল সংখ্যক পাকিস্তানি সৈন্য ভারী অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পরের দিন এরশাদ আলী ও তাঁর সহযোদ্ধাদের ওপর আর্টিলারি দিয়ে গোলাবর্ষণ শুরু করে। পাকিস্তানি সৈন্যদের আক্রমণের প্রচণ্ডতায় মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও তিনি অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকেন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে শত্রুসৈন্যদের ছোড়া গোলার আঘাতে এরশাদ আলী ও তাঁর সহযোদ্ধা আতাহার আলী মল্লিক, বীর বিক্রম- শহীদ হন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান দখল করে নেয়। সহমুক্তিযোদ্ধারা অপারেশনে শহীদ দুই বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃতদেহ উদ্ধার করতে পারেননি।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার শহীদ সিপাহি এরশাদ আলীকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৫৬, খেতাবের সনদ নং ৪৯)। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড