এলাঙ্গী হিন্দুপাড়া গণহত্যা
এলাঙ্গী হিন্দুপাড়া গণহত্যা (ধুনট, বগুড়া) সংঘটিত হয় ৭ই এপ্রিল। এতে অর্ধশতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু নিহত হয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা ধুনট থানা আক্রমণের খবর বগুড়া শহরে পৌঁছার পর পাকিস্তানি সেনারা ধুনটে আসে এবং প্রতিশোধ হিসেবে তারা এলাঙ্গী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ধুনট থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মজিবর রহমান ও বিহারিদের সহায়তায় ৭ই এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে এলাঙ্গী ইউনিয়নের হিন্দুপাড়ায় অভিযান চালায়। তারা শতশত ঘরবাড়িতে আগুন দেয় এবং নির্বিচারে গুলি চালায়। প্রতিটি বাড়ি থেকে পুরুষ, মহিলা ও শিশুদের ধরে দুর্গা ঘোষের পুকুর পাড়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। পাকিস্তানি বাহিনির গুলিতে ৫০-এর অধিক মানুষ নিহত হয়। তাদের মধ্যে ২৭ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- হরি সরকার, সেলবালা, সীতানাথ ঘোষ, সরবালা, ভরসা ঘোষ, বীরেন্দ্রনাথ কুণ্ডু নায়েব (তহসিলদার), বীরেন্দ্র নাথের পুত্র, নমী সুন্দরী সাহা, দূরাপাল (চন্ডী জান), হারান প্রামাণিক, বানু প্রামাণিক, খাকনি, মগর প্রামাণিক, আজিজার প্রামাণিক, আকু প্রামাণিক, আজগর মণ্ডল, জলিল প্রামাণিক, ছামিতন বেওয়া, মাধাই সাহা (শিশু), রাখাল দাস, সুলতান প্রামাণিক, খুকি বিবি, শান্তি বিবি, আলম সাহা (শিশু), জাবিতন বিবি (আসগর মণ্ডলের স্ত্রী), আমির ফকির ও মইফুল বিবি। রাস্তা ও ফসলের ক্ষেতে মৃতদেহগুলো পড়ে থাকে। পরে এলাকাবাসী মৃতদেহলো মাটিচাপা দেয়। হত্যাকাণ্ড শেষে হানাদাররা বাজারের দোকানপাট লুট করে দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে যায়। তারপর তারা ধুনটের বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে লুটতরাজসহ হত্যাকাণ্ড চালায়। বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগত নিরীহ ৭ জনকে জননী রাইচ মিলের দক্ষিণ দিকে নিয়ে হত্যা করে। ঐদিন সন্ধ্যায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী ৬ জন বিহারিকে চিকাবালা নদীর পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে এবং অন্যায়-অত্যাচারে প্রতিশোধ নেয়। [আহম্মেদ শরীফ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড