বীর বিক্রম এলাহী বক্স পাটোয়ারী
এলাহী বক্স পাটোয়ারী, বীর বিক্রম (১৯২৬-১৯৭১) আনসার সদস্য ও একজন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর জন্ম ১৯২৬ সালে চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলাধীন পশ্চিম কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত বাজাতি গ্রামে। তাঁর পিতার নাম মফিজ উদ্দিন পাটোয়ারী এবং মাতার নাম জীবনেন নেছা।
এলাহী বক্স পাটোয়ারী আনসার বাহিনীতে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি এ বাহিনীর প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি প্রথমে চাঁদপুর এলাকার প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। পরবর্তীতে তিনি ভারতের তেলঢালায় যান এবং নিয়মিত বাহিনীর ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের অন্তর্ভুক্ত হন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে গণবাহিনীর যোদ্ধাদের সঙ্গে তাঁকে চাঁদপুরে পাঠানো হয়। হাইমচর উপজেলার বাজাপ্তি গ্রামে গোপন ঘাঁটি তৈরি করে অন্য মুক্তযোদ্ধাদের সঙ্গে তিনি পাকবাহিনীর ওপর গেরিলা আক্রমণ চালান। আগস্ট মাসের ৩০ তারিখ বেড়িবাঁধে অবস্থান নিয়ে পাকসেনাদের ওপর গেরিলা আক্রমন করলে তারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। পরবর্তীতে রাঘবপুরে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প স্থানান্তর করা হলে সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পাকবাহিনী ঐ ক্যাম্পের ওপর অতর্কিতে প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। ক্যাম্পে তখন এলাহী বক্সসহ মাত্র ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছিলেন। এ অবস্থায় তাঁরা দৃঢ় মনোবল ও সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকেন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে এলাহী বক্স মারাত্মকভাবে আহত এবং ২ জন সহযোদ্ধা শহীদ হন। আহত অবস্থায় তিনি নিজ বাড়িতে চলে আসেন। এরপর ২১শে সেপ্টেম্বর পাকসেনারা তাঁকে বাড়ি থেকে ধরে নদীর তীরে এনে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাঁকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ৫ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম লুৎফা খাতুন। [হারুন রশীদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড