You dont have javascript enabled! Please enable it! উনসত্তরের আইয়ুব-বিরােধী গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এগারােদফা কর্মসূচি - সংগ্রামের নোটবুক

এগারােদফা কর্মসূচি

এগারােদফা কর্মসূচি উনসত্তরের আইয়ুব-বিরােধী গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মসূচি। পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে বঙ্গবন্ধুর ছয়দফা কর্মসূচি ঘােষণা (১৯৬৬) এবং ৬-দফা মােকাবেলায় আইয়ুব সরকারের আগরতলা মামলাদায়ের (১৯৬৮) – এরূপ পটভূমিতে ষাটের দশকের শেষদিকে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের অবসানের লক্ষ্যে বিক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তােলার পদক্ষেপ নেন। ১৯৬৮ সালের অক্টোবর মাসে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের মেনন ও মতিয়া উভয় গ্রুপ রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তােলে। এ তিনটি ছাত্র সংগঠন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ১৯৬৯ সালের ৪ঠা জানুয়ারি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। এসময় সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ফেডারেশনে (এনএসএফ) ভাঙ্গন সৃষ্টি হয় এবং মাহবুবুল হক দোলন, ইব্রাহিম খলিল ও নাজিম কামরান চৌধুরীর নেতৃত্বে এনএসএফ-এর একাংশ সংগ্রাম পরিষদে যােগ দেয়। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ১৪ই জানুয়ারি ‘সংগ্রামী ছাত্র সমাজের ডাক’ শিরােনামে এক প্রচারপত্রে এগারােদফা দাবি ঘােষণা করে। দাবিনামার প্রচারপত্রে সংগ্রামী ছাত্রসমাজের পক্ষে স্বাক্ষর করেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুর রউফ ও সাধারণ সম্পাদক খালেদ মােহাম্মদ আলী, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (মতিয়া) সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমদ মানিক ও সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দোহা, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন) সভাপতি মােস্তফা জামাল হায়দার ও সহ-সম্পাদিকা দীপা দত্ত এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি তােফায়েল আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক নাজিম কামরান চৌধুরী।
এগারােদফা কর্মসূচি ছিল নিম্নরূপ:
১। (ক) সচ্ছল কলেজসমূহকে প্রাদেশিকীকরণের নীতি পরিত্যাগ করিতে হইবে এবং জগন্নাথ কলেজসহ প্রাদেশিকীকরণকৃত কলেজসমূহকে পূর্বাবস্থায় ফিরাইয়া দিতে হইবে। (খ) শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের জন্য প্রদেশের সর্বত্র বিশেষ করিয়া গ্রামাঞ্চলে স্কুল-কলেজ স্থাপন করিতে হইবে এবং বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত স্কুল-কলেজসমূহকে সত্বর অনুমােদন দিতে হইবে। কারিগরি শিক্ষা প্রসারের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পলিটেকনিক, টেকনিক্যাল ও কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট স্থাপন করিতে হইবে। (গ) প্রদেশের কলেজসমূহে দ্বিতীয় শিফটে নৈশ আইএ, আইএসসি, আইকম ও বিএ, বিএসসি, বিকম এবং প্রতিষ্ঠিত কলেজসমূহে নৈশ এমএ ও এমকম ক্লাস চালু করিতে হইবে। (ঘ) ছাত্র বেতন শতকরা ৫০ ভাগ হাস করিতে হইবে। স্কলারশিপ ও স্টাইপেন্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি করিতে হইবে এবং ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার অপরাধে স্কলারশিপ ও স্টাইপেন্ড কাড়িয়া লওয়া চলিবে না। (ঙ) হল, হােস্টেলের ডাইনিং হল ও কেন্টিন খরচার শতকরা ৫০ ভাগ সরকার কর্তৃক সাবসিডি’ হিসাবে প্রদান করিতে হইবে। (চ) হল ও হােস্টেল সমস্যার সমাধান করিতে হইবে। (ছ) মাতৃভাষার মাধ্যমে সর্বস্তরে শিক্ষার ব্যবস্থা করিতে হইবে। অফিস আদালতে বাংলা ভাষা চালু করিতে হইবে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত সংখ্যক অভিজ্ঞ শিক্ষকের ব্যবস্থা করিতে হইবে। শিক্ষকের বেতন বৃদ্ধি করিতে হইবে এবং স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকার দিতে হইবে। (জ) অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করিতে হইবে। নারী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার করিতে হইবে। (ঝ) মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করিতে হইবে এবং অটোমেশন প্রথা বিলােপ, নমিনেশনে ভর্তি প্রথা বন্ধ, মেডিকেল কাউন্সিল অর্ডিন্যান্স বাতিল, ডেন্টাল কলেজকে পূর্ণাঙ্গ কলেজে পরিণত করা প্রভৃতি মেডিকেল ছাত্রদের দাবি মানিয়া লইতে হইবে। নার্স ছাত্রীদের সকল দাবি মানিয়া লইতে হইবে। (ঞ) প্রকৌশল শিক্ষার অটোমেশন প্রথা বিলােপ, ১০% ও ৭৫% রুল বাতিল, সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সুব্যবস্থা, প্রকৌশল ছাত্রদের শেষবর্ষেও ক্লাস দেওয়ার ব্যবস্থাসহ সকল দাবি মানিয়া লইতে হইবে। (ট) পলিটেকনিক ছাত্রদের কনডেন্সড কোর্সের সুযােগ দিতে হইবে এবং বাের্ড ফাইনাল পরীক্ষা বাতিল করিয়া একমাত্র সেমিস্টার পরীক্ষার ভিত্তিতেই ডিপ্লোমা দিতে হইবে। (ঠ) টেক্সটাইল, সিরামিক, লেদার টেকনােলজি এবং আর্ট কলেজ ছাত্রদের সকল দাবি অবিলম্বে মানিয়া লইতে হইবে। আইইআর ছাত্রদের দশদফা; সমাজকল্যাণ কলেজ ছাত্রদের, এমবিএ ছাত্রদের ও আইনের ছাত্রদের সমস্ত দাবি মানিয়া লইতে হইবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্য বিভাগকে আলাদা ‘ফ্যাকাল্টি করিতে হইবে। (ড) কৃষি বিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্রদের ন্যায্য দাবি মানিয়া লইতে হইবে। কৃষি ডিপ্লোমা ছাত্রদের কনডেন্সড কোর্সের দাবিসহ কৃষি ছাত্রদের সকল দাবি মানিয়া লইতে হইবে। (ঢ) ট্রেনে, স্টিমারে ও লঞ্চে ছাত্রদের ‘আইডেন্টিটি কার্ড’ দেখাইয়া শতকরা পঞ্চাশ ভাগ কন্সেশনে টিকিট দেওয়ার ব্যবস্থা করিতে হইবে। মাসিক টিকিটেও কন্সেশন’ দিতে হইবে। পশ্চিম পাকিস্তানের মত বাসে ১০ পয়সা ভাড়ায় শহরের যে-কোনাে স্থানে যাতায়াতের ব্যবস্থা করিতে হইবে। দূরবর্তী অঞ্চলে বাস যাতায়াতেও শতকরা ৫০ ভাগ কন্সেশন’ দিতে হইবে। ছাত্রীদের স্কুল-কলেজে যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা করিতে হইবে। সরকারি ও আধাসরকারি উদ্যোগে আয়ােজিত খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছাত্রদের শতকরা ৫০ ভাগ ‘কন্সেশন’ দিতে হইবে। (ণ) চাকরির নিশ্চয়তা বিধান করিতে হইবে। (ত) কুখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স সম্পূর্ণ বাতিল করিতে হইবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হইবে। (থ) শাসকগােষ্ঠীর শিক্ষা সংকোচন নীতির প্রামাণ্য দলিল জাতীয় শিক্ষা কমিশন রিপাের্ট ও হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপাের্ট সম্পূর্ণ বাতিল করিতে এবং ছাত্রসমাজ ও দেশবাসীর স্বার্থে গণমুখী ও বৈজ্ঞানিক শিক্ষা ব্যবস্থা কায়েম করিতে হইবে।
২. প্রাপ্ত বয়স্কদের ভােটে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে। বাক-স্বাধীনতা, ব্যক্তি-স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিতে হইবে। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার উপর হইতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করিতে হইবে।
৩। নিম্নলিখিত দাবিসমূহ মানিয়া লইবার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হইবে; (ক) দেশের শাসনতান্ত্রিক কাঠামাে হইবে ফেডারেশন শাসনতান্ত্রিক রাষ্ট্রসংঘ এবং আইন পরিষদের ক্ষমতা হইবে সার্বভৌম। (খ) ফেডারেল সরকারের ক্ষমতা দেশরক্ষা, বৈদেশিক নীতি ও মুদ্রা এই কয়টি বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকিবে। অপরাপর সকল বিষয়ে অঙ্গ রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতা হইবে নিরঙ্কুশ। (গ) দুই অঞ্চলের জন্য একই মুদ্রা থাকিবে। এই ব্যবস্থায় মুদ্রা কেন্দ্রের হাতে থাকিবে। কিন্তু এই অবস্থায় শাসনতন্ত্রে এমন সুনির্দিষ্ট বিধান থাকিতে হইবে যে, যাহাতে পূর্ব পাকিস্তানের মুদ্রা পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হইতে না পারে। এই বিধানে পাকিস্তানে একটি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থাকিবে। দুই অঞ্চলে দুইটি পৃথক রিজার্ভ ব্যাংক থাকিবে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক অর্থনীতি প্রবর্তন করিতে হইবে। (ঘ) সকল প্রকার ট্যাক্স, খাজনা, কর ধার্য ও আদায়ের সকল ক্ষমতা থাকিবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে। ফেডারেল সরকারের কোনাে কর ধার্য করিবার ক্ষমতা থাকিবে না। আঞ্চলিক সরকারের আদায়ী রেভিনিউর নির্ধারিত অংশ আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে ফেডারেল তহবিলে জমা হইবে। এই মর্মে রিজার্ভ ব্যাংকসমূহের উপর বাধ্যতামূলক বিধান শাসনতন্ত্রে থাকিবে। (ঙ) ফেডারেশনের প্রতিটি রাষ্ট্র বহিঃবাণিজ্যের পৃথক হিসাব রক্ষা করিবে এবং বহিঃবাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত মুদ্রা অঙ্গ রাষ্ট্রগুলির এক্তিয়ারাধীন থাকিবে। ফেডারেল সরকারের প্রয়ােজনীয় বিদেশী মুদ্রা অঙ্গ রাষ্ট্রগুলি সমানভাবে অথবা শাসনতন্ত্রের নির্ধারিত ধারা অনুযায়ী প্রদান করিবে। দেশজাত দ্রব্যাদি বিনাশুল্কে অঙ্গ রাষ্ট্রগুলির মধ্যে আমদানি-রপ্তানি চলিবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে বিদেশী রাষ্ট্রগুলির সাথে চুক্তি সম্পাদনের, বিদেশে ট্রেড মিশন স্থাপনের এবং আমদানি-রপ্তানি করিবার অধিকার অঙ্গ রাষ্ট্রগুলির হাতে ন্যস্ত করিয়া শাসনতন্ত্রে বিধান করিতে হইবে। (চ) পূর্ব পাকিস্তানকে মিলিশিয়া বা প্যারা মিলিটারি রক্ষী বাহিনী গঠনের ক্ষমতা দিতে হইবে। পূর্ব পাকিস্তানে অস্ত্র কারখানা নির্মাণ ও নৌবাহিনীর সদর দফতর স্থাপন করিতে হইবে।
৪। পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধুসহ সকল প্রদেশের স্বায়ত্তশাসন প্রদান করতঃ সাব ফেডারেশন গঠন করিতে হইবে।
৫। ব্যাংক-বিমা, পাটব্যবসা ও বৃহৎ শিল্প জাতীয়করণ করিতে হইবে।
৬। কৃষকের উপর হইতে খাজনা ও ট্যাক্সের হার হ্রাস করিতে হইবে এবং বকেয়া খাজনা ও ঋণ মওকুফ করিতে হইবে। সার্টিফিকেট প্রথা বাতিল ও তহশিলদারদের অত্যাচার বন্ধ করিতে হইবে। পাটের সর্বনিম্ন মূল্য মণপ্রতি ৪০ টাকা নির্ধারণ এবং আখের ন্যায্য মূল্য দিতে হইবে।
৭। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও বােনাস দিতে হইবে এবং শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদির ব্যবস্থা করিতে হইবে। শ্রমিক স্বার্থবিরােধী কালাকানুন প্রত্যাহার করিতে হইবে এবং ধর্মঘটের অধিকার ও ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রদান করিতে হইবে।
৮। পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও জল সম্পদের সার্বিক ব্যবহারের ব্যবস্থা করিতে হইবে।
৯। জরুরি আইন প্রত্যাহার, নিরাপত্তা আইন ও অন্যান্য নিবর্তনমূলক আইন প্রত্যাহার করিতে হইবে।
১০। সিয়াটো, সেন্টো, পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিল করিয়া জোট বহির্ভূত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি কায়েম করিতে হইবে।
১১। দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক সকল ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, রাজনৈতিক কর্মী ও নেতৃবৃন্দের অবিলম্বে মুক্তি, গ্রেফতারি পরােয়ানা ও হুলিয়া প্রত্যাহার এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাসহ সকল রাজনৈতিক কারণে রুজুকৃত মামলা প্রত্যাহার করিতে হইবে।
সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আন্দোলনের সূচনালগ্নে পিডিএমপন্থী আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল ডেমােক্রেটিক ফ্রন্ট (NDF), জামায়াতে ইসলামী, নেজাম-ই-ইসলাম, কাউন্সিল মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ওয়ালি খান), জমিয়তে ওলামায়ে ইসয়দফা দাবির সব অন্তর্ভুক্ত হয়। এগারােদফায় বাঙালি মধ্যবিত্ত কৃষক-শ্রমিকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দাবিও গুরুত্ব পায়। ফলে, এগারােদফার আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক গণসমর্থন লাভ করে এবং আইয়ুব-বিরােধী আন্দোলনের নেতৃত্ব কার্যত চলে আসে। ছাত্রসমাজের হাতে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগর। কিন্তু সংগ্রাম পরিষদের কর্মসূচিতে দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরের ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিকসহ সকল শ্রেণির মানুষ অংশগ্রহণ করে। পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্রসমাজও একই সময় আইয়ুব-বিরােধী আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে। ছাত্র আন্দোলন ১৯৬৮ সালের নভেম্বর মাসে শুরু হয়ে ১৯৬৯ সালের মধ্য-জানুয়ারিতে গণআন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এগারােদফা এবং আওয়ামী লীগের ছয়দফা কর্মসূচির ভিত্তিতেই রচিত হয় উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]
সহায়ক গ্রন্থ: হাসান হাফিজুর রহমান (সম্পাদিত), বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, দ্বিতীয় খণ্ড, তথ্য মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, জুন ২০০৯, পৃ. ৪০৯।

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড