You dont have javascript enabled! Please enable it!

এজাজ বাহিনী

এজাজ বাহিনী (রায়পুর, লক্ষ্মীপুর) মুক্তিযােদ্ধাদের একটি স্থানীয় বাহিনী। এর প্রধান ছিলেন মাে. এজাজ হােসেন (পিতা এডভােকেট বশরত উল্যাহ, রাখালিয়া)। তিনি ভারতের দেরাদুন থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ এলাকা লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি এ এলাকায় মুক্তিযুদ্ধকালে ছাত্রদের নিয়ে গঠিত একটি বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। এ বাহিনীতে মুক্তিযােদ্ধা আমির হােসেন মােল্লা, আ ও ম শফিকউল্যাহ, মুজিবুল হক, সিরাজ, মান্নান কবিরাজ ও সেকান্দরসহ মােট ২৪ জন সদস্য ছিলেন। রায়পুর-লক্ষ্মীপুর এলাকার মুক্তিযুদ্ধে এজাজ হােসেন ও তার বাহিনী বিশেষ সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় দেয় এবং খ্যাতি লাভ করে।
৩১শে জুলাই ভােরবেলা মুক্তিযােদ্ধারা রায়পুর রাজাকারক্যাম্প আক্রমণের প্রস্তুতি নেন। এতে এজাজ হােসেনও অংশগ্রহণ করেন। ১লা আগস্ট রায়পুর রাজাকার প্রশিক্ষণ সেন্টার (এল এম হাইস্কুল) আক্রমণের প্রাক্কালে গােপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে দুজন রাজাকার এসে মুক্তিযােদ্ধা আবুল বাশারকে গুলি করে হত্যা করে। নিহত বাশারের এসএলআর নিয়ে এক রাজাকার ও মুক্তিযােদ্ধা কমান্ডার আবদুল মতিনের মধ্যে ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। এসময় এজাজ হােসেন তার এলএমজি দিয়ে ঐ রাজাকারের মাথায় গুলি করে তাকে হত্যা করেন। এতে কমান্ডার আবদুল মতিনসহ অন্য মুক্তিযােদ্ধারা রক্ষা পান।
১৬-১৯শে সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ সড়কে প্রায় ১২ কিমি ব্যাপী চৌধুরী বাজার থেকে ফতেহপুর পর্যন্ত এম্বুশে মুক্তিযােদ্ধাদের ২০টি দলে প্রায় ৯০ জন অংশ নেন। এজাজ হােসেনও তাঁর বাহিনী নিয়ে এতে অংশ নেন। এ সময় ২৫ জন পাকসেনা আক্রমণের শিকার হয়। পাকিস্তানি কমান্ডার মেজর ইমতিয়াজ নিহত হয় এবং তার বাইনােকুলারটি মুক্তিযােদ্ধারা হস্তগত করেন।
২৫শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর রায়পুর কাজীর দিঘীর পাড় ও মীরগঞ্জ রাজাকার ক্যাম্প দুটিতে আক্রমণে যে ৯০ জন মুক্তিযােদ্ধা অংশ নেন, তন্মধ্যে এজাজ হােসেনও ছিলেন। এ-দুটি যুদ্ধে কয়েকজন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে, ৪২ জন রাজাকার বন্দি হয় এবং বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার হয়।
৪ঠা ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর মুক্ত করার চূড়ান্ত যুদ্ধেও এজাজ হােসেন ও তার বাহিনী অংশগ্রহণ করে। এদিন লক্ষ্মীপুর শহরে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়। ৪ঠা ডিসেম্বর কমান্ডার এজাজসহ মুক্তিযােদ্ধারা লক্ষ্মীপুরের বর্তমান শহীদ স্মৃতি হাইস্কুল সংলগ্ন তালগাছের গােড়ায় এম্বুশ নিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে বাগবাড়ি হানাদার ক্যাম্পের জানালা গুড়িয়ে দেন। এতে মুক্তিযােদ্ধা রফিক, মতিন ওস্তাদ, এজাজ হােসেন, হামদে রাব্বী, আ ও ম শফিকউল্যা, জয়নাল, আলতাফ ওস্তাদ, কাজল বাবু, মনির (জকসিন), মনা বাকশাল, আনােয়ার মাস্টার, তােফায়েল, ধনু মিয়া, আবুল খায়ের প্রমুখ মুক্তিযােদ্ধা অংশ নেন। [গাজী গিয়াস উদ্দিন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!