You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক এ টি এম খালেদ

এ টি এম খালেদ, বীর প্রতীক (১৯৫২-১৯৮০)। ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যােগদানকারী ও ১১ নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৫২ সালের ১১ই জানুয়ারি গাইবান্ধা জেলা শহরের মধ্যপাড়ার স্কুল লেনের পৈতৃক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম গােলাম মওলা প্রামাণিক, মাতার নাম রেজিয়া খাতুন। তাঁর ডাকনাম দুলু। এ নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন। ৩ ভাই ও ৬ বােনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। ১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে তিনি অনুপ্রাণিত হন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বাঙালিদের ওপর গণহত্যা, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযােগ ইত্যাদি শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
এ টি এম খালেদ স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের সঙ্গে প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ শেষে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ভারতে যান। ভারতে তিনি দেরাদুন ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করে ১১ নম্বর সেক্টরের মানকারচর সাব-সেক্টরে যােগদান করেন। সাব-সেক্টর কমান্ডার সুবেদার আফতাব আলীর নেতৃত্বে তিনি কুড়িগ্রাম জেলার কোদালকাটি ও চিলমারীসহ আরাে কয়েকটি জায়গায় অপারেশন এবং সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১লা অক্টোবর সুবেদার আলতাফের নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধাদের কয়েকটি দল কোদালকাটির পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করেন। এর একটি দলে ছিলেন এ টি এম খালেদ। দুদিন ধরে সেখানে যুদ্ধ হয়। ৩রা অক্টোবর হানাদারদের পক্ষ থেকে কোনাে গােলাগুলির শব্দ না পেয়ে তিনিসহ কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কলাগাছের ভেলায় করে নদী পাড়ি দিয়ে পাকিস্তানি অবস্থানে গিয়ে দেখেন সেখানে হানাদার বাহিনীর কেউ নেই। এক পর্যায়ে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
এ টি এম খালেদ যেসব যুদ্ধে অংশ নেন, তার মধ্যে চিলমারী যুদ্ধ অন্যতম। ১৭ই অক্টোবর চিলমারীতে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। সেদিন মুক্তিযােদ্ধারা একযােগে পাকিস্তানিদের বিভিন্ন অবস্থানে আক্রমণ করেন। এ টি এম খালেদ এবং কাজিউল ইসলাম একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন। তাঁদের প্রচণ্ড আক্রমণে সেখানকার হানাদার সৈন্যরা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। বেশির ভাগ পাকিস্তানি সৈন্য পালিয়ে তাদের মূল ঘাঁটিতে আশ্রয় নেয়। এ টি এম খালেদ একজন পাকিস্তানি সৈন্যকে আটক করেন। তাকে পরবর্তীতে মিত্রবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়। এছাড়া তিনি ছায়াপুর ব্রিজ ও গাইবন্ধা ব্রিজ ধ্বংসসহ একই দিনে চণ্ডিপুর স্কুল ক্যাম্পে কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকারকে হত্যা করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা প্রদর্শন ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক এ টি এম খালেদকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ শেষে তিনি পুনরায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পড়ায় কয়েক বছর তার পড়াশােনা বিঘ্নিত হয়। ১৯৮০ সালের ১১ই জানুয়ারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংঘর্ষে তিনি নিহত হন। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। [রেহানা পারভীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!