বীর বিক্রম এ টি এম হামিদুল হােসেন
এ টি এম হামিদুল হােসেন, বীর বিক্রম (জন্ম ১৯৫৪) একজন অসীম সাহসী মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৫৪ সালে বগুড়া সদর উপজেলার হাজেরাদিঘী ইউনিয়নের রজাকপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল হামিদ ও মাতার নাম মনােয়ারা হামিদ।
৭১-এ হামিদুল হােসেন ছাত্র হিসেবে পুলিশ কর্মকর্তা পিতার কর্মস্থল সৈয়দপুরে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনিসহ তাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যরা সৈয়দপুর সেনানিবাসে আটক ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি কৌশলে পুরাে পরিবারসহ সেনানিবাস থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হন। এরপর তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে ভারতে যান। সেখানে প্রশিক্ষণ শেষে ৭নং সেক্টরে যােগদান করে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে সাহস, বীরত্ব ও রণকৌশল প্রদর্শন করেন। দিনাজপুর-ফুলবাড়ি সড়কের মােহনপুর ব্রিজ অপারেশন, ফুলবাড়ি যুদ্ধ ও রংপুরের পীরগঞ্জ এম্বুশ তাঁর যুদ্ধকালীন উল্লেখযােগ্য ঘটনা। ১৭ই নভেম্বর রাত ৯টায় দলনেতা মেজর ডিলনের আপত্তি উপেক্ষা করে হামিদুল দুজন সহযােদ্ধা নিয়ে দিনাজপুর-ফুলবাড়ি সড়কের মােহনপুর ব্রিজ এলাকায় পাকবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ চালিয়ে ৬টি রাইফেল ও ১টি টু-ব্যান্ড রেডিও হস্তগত করেন। ২২শে নভেম্বর তিনি ফুলবাড়িতে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ভাের সাড়ে ৫টায় যুদ্ধ শুরু হয়। কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর মুক্তিযােদ্ধারা হামিদুল হােসেনের নেতৃত্বে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে গুলি করতে-করতে পাকবাহিনীর অবস্থানের দিকে অগ্রসর হন। এক পর্যায়ে তারা গ্রেনেড চার্জ করে পাকবাহিনীর কয়েকটি বাংকার ধ্বংস করতে সক্ষম হন। ডিসেম্বরের ৭-৮ তারিখের দিকে হামিদুল হােসেন পীরগঞ্জ অপারেশনে সাহসী ভূমিকা রাখেন। এ অভিযানে মিত্রবাহিনীর পিটি ৭৬ ট্যাংক অংশগ্রহণ করে। হামিদুল হােসেন সামনের ট্যাংকে চড়ে পাকবাহিনীর অবস্থানের দিকে অগ্রসর হন। এক পর্যায়ে শত্রুপক্ষের ৫/৬টি জিপের একটি কনভয় এগিয়ে আসতে দেখে হামিদুলসহ কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধা এম্বুশ করেন। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড গােলাগুলি শুরু হয়। এ-যুদ্ধে পাকবাহিনীর একটি জিপ ক্ষতিগ্রস্থ হয়, পাকিস্তানি জেনারেল নজর শাহ পালিয়ে যায়, মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে তার রানারসহ ২ জন শত্রুসেনা বন্দি হয় এবং মুক্তিযােদ্ধারা তাদের একটি সামরিক ম্যাপ উদ্ধার করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহস ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মুক্তিযােদ্ধা এ টি এম হামিদুল হােসেনকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধপরবর্তীকালে ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যােগদান করেন। ১৯৭৫ সালে কমিশন লাভ করেন এবং ১৯৮৯ সালে মেজর পদে দায়িত্ব পালনকালে সেনাবাহিনী থেকে তাঁকে অকালীন অবসর দেয়া হয়। তিনি ১ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক। তার স্ত্রীর নাম আজিজুন্নেছা শাম্মী। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড