You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর উত্তম, বীর বিক্রম এ ডব্লিউ চৌধুরী

এ ডব্লিউ চৌধুরী, বীর উত্তম, বীর বিক্রম (জন্ম ১৯৪৩) সাবমেরিনার। পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফ্রান্স থেকে ভারতে এসে মুক্তিযুদ্ধে তার যােগদান। মুক্তিযুদ্ধকালে নৌকমান্ডাে দল ও স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ নৌবাহিনী গঠনে তিনি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম বন্দরে ৯টি পাকিস্তানি জাহাজ ধ্বংসের দুঃসাহসিক অপারেশন জ্যাকপট-এ তিনি নেতৃত্ব দান করেন। অপারেশন জ্যাকপটের কমান্ডােরা ছিলেন আত্মঘাতী দলের সদস্য। এ বীর নৌ মুক্তিযােদ্ধার পূর্ণ নাম আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী। এ ডব্লিউ চৌধুরী নামেই সর্বাধিক পরিচিত। ১৯৪৩ সালের ৩১শে ডিসেম্বর তৎকালীন নােয়াখালী জেলার ফেনী শহরে তাঁর জন্ম। পিতার নাম ডা. শামসুল হুদা চৌধুরী এবং মাতার নাম গুল-এ আনার বেগম। পিতার চাকরির কারণে তাঁর শৈশব-কৈশাের কলকাতা ও ঢাকা শহরে কেটেছে। ঢাকার তেজগাঁও পলিটেকনিক স্কুল থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পরপর তিনি পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যােগ দিয়ে করাচি চলে যান। সেখানে উচ্চতর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর সাবমেরিনার হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালন শুরু হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরীর অপারেশন জ্যাকপট-এ যােগদানের ঘটনা খুবই লােমহর্ষক। ১৯৭০ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু পর্যন্ত তিনি ফ্রান্সে অবস্থান করছিলেন। ফ্রান্সের কাছ থেকে পাকিস্তানের ‘পিএনএস ম্যানগ্রো’ নামে ক্রয়কৃত সাবমেরিনটি কমিশন লাভের পর পাকিস্তানে নিয়ে আসার জন্য অন্যদের সঙ্গে তাঁকে দায়িত্বে নিয়ােজিত করা হয়। তিনি ফ্রান্সের তুলো পাের্টে নির্মিত সাবমেরিনটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছিলেন। মাতৃভূমি থেকে বহুদূরে অবস্থান করলেও তার মধ্যে ছিল গভীর দেশপ্রেম। সার্ভিসে থাকার সুবাদে তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন কীভাবে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের সব সময় ছােট বা হেয় করে দেখে আর কীভাবে চাকরি ক্ষেত্রে পদে পদে তারা বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। ৭০-এর প্রলয়ংকরী জলােচ্ছ্বাসে বাংলাদেশের সমুদ্রকূলবর্তী অঞ্চলের কয়েক লক্ষ মানুষের প্রাণহানী সত্ত্বেও পাকিস্তানের শাসকগােষ্ঠীর ঔদাসীন্য তাঁকে দারুণভাবে পীড়িত করে। ৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ-এর বিরাট বিজয় অর্জন সত্ত্বেও ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তার ষড়যন্ত্রের আশ্রয়গ্রহণ সকল বাঙালির মতাে তাকেও ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ করে। পাকিস্তানি শাসকদের আসল উদ্দেশ্য যে সামরিক ক্র্যাকডাউনের মাধ্যমে বাঙালিদের চিরতরে স্তব্ধ করা, সেটি তিনি দূরে বসেও সহজেই অনুধাবন করতে পারেন। এরপর পাকিস্তানি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলায় শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সর্বাত্মক অসহযােগ আন্দোলন। অসহযােগ আন্দোলন চলাকালে ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সৌহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১০ লক্ষ জনতার এক উত্তাল মহাসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে কার্যত বাঙালি জাতির উদ্দেশে তার ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। একজন সচেতন দেশপ্রেমিক নৌ-সৈনিক হিসেবে তােমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মােকাবেলা কর’ – বঙ্গবন্ধুর এ নির্দেশ অনুযায়ী শত্রুর বিরুদ্ধে কী করতে হবে, সুদূর বিদেশে অবস্থান করা সত্ত্বেও সেটি বুঝতে তার সামান্যতম সময় লাগেনি। অসহযােগ আন্দোলন চলাকালে ২৫শে মার্চ পাকহানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় মানব জাতির ইতিহাসে এক জঘন্যতম গণহত্যা। ফরাসি পত্রিকা লা মন্ডে ও বিবিসির মাধ্যমে তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা বিষয়টি প্রথম জানতে পারেন। ২৬শে মার্চই আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী মনে-মনে সিদ্ধান্ত নেন ১লা এপ্রিল ‘পিএনএস ম্যানগ্রো’র করাচির উদ্দেশে ফ্রান্সের তুলো পাের্ট ছাড়ার কথা থাকলেও তিনি পাকিস্তানে আর ফিরে যাবেন না, বরং মুক্তিযুদ্ধে যােগদান করবেন। কয়েকদিন থেকেই সহকর্মী কয়েকজন বাঙালি সাবমেরিনারের সঙ্গে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে গােপনে তিনি আলাপ করছিলেন। ২৯শে মার্চ তারা মােট ৯ জন ফ্রান্স থেকে গােপনে বিভিন্ন পথে (জেনেভা, ইতালি, স্পেন) হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যােগদানের একাধিক প্রচেষ্টা গ্রহণের পর সর্বশেষে মাদ্রিদে অবস্থিত ভারতের দূতাবাসের সার্বিক সহযােগিতায় ১০ই এপ্রিল তিনিসহ ৮ জন সাবমেরিনার (১ জন লন্ডন চলে যান) বােম্বে (বর্তমান মুম্বাই) পৌছতে সমর্থ হন। সেখান থেকে দিল্লি পৌছে ভারতীয় নৌবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁদের বেঠক হয়। ঐ বৈঠকে কর্নেল এম এ জি ওসমানীও উপস্থিত ছিলেন। মুক্তিযােদ্ধাদের একটি নৌকামান্ডাে বাহিনী গড়ে তােলার লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত হয়। তাঁদের প্রথমে দিল্লির নিকটবর্তী যমুনা নদীতে ৫ কেজি ওজনের লিমপেট মাইন কোমরে বেঁধে কীভাবে সাঁতার কাটতে হয়, কীভাবে তা পানির ভেতর থেকে জাহাজের তলদেশে বসাতে হয়, কীভাবে সেফটি ফিউজ লাগাতে হয়, কীভাবে ডেটোনেটর সক্রিয় করতে হয়, কীভাবে প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ ব্যবহার করতে হয় ইত্যাদি বিষয়ে ট্রেনিং দেয়া হয়। সে-সময় লক্ষ্যবস্তু ডিমােলিশনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে তাদের দিল্লির কুতুব মিনারে নিয়ে যাওয়া হতাে। এরপর মে মাসের মাঝামাঝি ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী পলাশীর নির্জন স্থানে একটি নৌ-কমান্ডাে ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। ২১শে মে থেকে শুরু করে জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত সেখানে মােট ৫০০ জনের অধিক নৌ-কমান্ডােকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ ডব্লিউ চৌধুরী ও ফ্রান্স থেকে আগত অপর ৭ জন সাবমেরিনার তাঁদের ইনস্ট্রাক্টর ও লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভারতীয় নৌ-কমান্ডােগণ এখানে নবীন নৌকমান্ডােদের ট্রেনিং প্রদান করেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বেই একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের আকাশ পথ দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে আসা-যাওয়া ভারত সরকার পাকিস্তানিদের জন্য বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় কলম্বাে থেকে সমুদ্র পথে পাকিস্তানিরা এখানে সৈন্য ও অস্ত্র-গােলাবারুদ নিয়ে আসছিল। অতএব বড় নৌবন্দর ও নৌ যােগাযােগ বিনষ্ট বা অকার্যকর করার উদ্দেশ্যে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যৌথ সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা অনুযায়ী আগস্ট মাসের মধ্যভাগে চট্টগ্রাম ও মংলাসহ অন্য আরাে কয়েকটি সমুদ্র ও নৌবন্দরে নৌকমান্ডাে আপারেশনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ও কার্যকর নৌকমান্ডাে অভিযান ছিল অপারেশন জ্যাকপট। এর আওতায় ১৫ই আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর অভিযানের জন্য সাবমেরিনার আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী, বীর উত্তম, বীর বিক্রম-এর নেতৃত্বে ৬০ জন চৌকস আত্মঘাতী কমান্ডাের একটি দল নিযুক্ত করা হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে দলনেতা আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী কমান্ডােদের ২০ জন করে ৩টি গ্রুপে ভাগ করে ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম সীমান্ত থেকে ১০ই আগস্ট বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। কয়েক রাত দীর্ঘ ও ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি, কোথাও কর্দমাক্ত পথ পায়ে হেঁটে ও নৌকায় চড়ে ছাগলনাইয়া-ফেনী-মিরসরাই হয়ে দলের দুটি গ্রুপের ৪০ জন কমান্ডাে ১৩ই আগস্ট চট্টগ্রামে পৌঁছতে সক্ষম হন। মিরসরাইর সমিতির হাটের এক বাড়িতে থাকা অবস্থায় ১৩ই আগস্ট সকালে আকাশবাণী কলকাতা ‘খ’ কেন্দ্র থেকে অপারেশনের পূর্বপ্রস্তুতির সংকেত হিসেবে আমি তােমায় যত শুনিয়েছিলেম গানটি পঙ্কজ মল্লিকের কণ্ঠে বেজে ওঠে। একই দিন বিকেলে চট্টগ্রাম শহরের ও. আর নিজাম রােডের এনায়েত মওলার বাসা ‘কাকলী’-তে তিনি কমান্ডাে খােরশেদ আলম ও ডা. শাহ আলমসহ এসে ওঠেন। সন্ধ্যায় একই বেতার কেন্দ্র থেকে ঐ গানটির পুনঃপ্রচার শুনতে পান। সেখান থেকে পানওয়ালাপাড়ার ‘সবুজবাগে’ আবদুল হাই সরদারের বাড়িতে এ ডব্লিউ চৌধুরী, মৌলভী সৈয়দ আহম্মদ (মৌলভী সৈয়দ নামে পরিচিত; প্রধান বেইজ কমান্ডার), কমান্ডাে খােরশেদ আলম ও ডা. শাহ আলম অপারেশন পরিকল্পনা নিয়ে এক গােপন বৈঠক করেন। উল্লেখ্য, আবদুল হাই সরদারের সবুজবাগের বাড়িটি ছিল কন্টাক্ট পয়েন্ট ও মৌলভী সৈয়দের গােপন শেল্টার বা বেইজ ক্যাম্প। ঐ বৈঠক শেষে এ ডব্লিউ চৌধুরী অপর দুই কমান্ডােসহ এনায়েত মওলার ও. আর নিজাম রােডের বাড়িতে ফিরে এসে সেখানে রাত্রি যাপন করেন। পরের দিন ১৪ই আগস্ট মৌলভী সৈয়দ, আবু সাইদ সরদার (বেইজ কমান্ডার), মঈনউদ্দীন খান বাদল (বেইজ কমান্ডার), জালাল উদ্দিন আহমেদ (বেইজ কমান্ডার), মাে. হারিছ (বেইজ কমান্ডার), জানে আলম (মুক্তিযােদ্ধা), কমান্ডাে খােরশেদ আলম, আবু সিদ্দিক সরদার (মুক্তিযােদ্ধা ও আবু সাইদ সরদারের সহােদর), মােহাম্মদ ইউনুস (মুক্তিযােদ্ধা) এবং চট্টগ্রামের অন্যান্য মুক্তিযােদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের সহায়তায় জীবনের ঝুঁকি ও পাকিস্তানিদের একের পর এক চেকপােস্ট অতিক্রম করে তিনি লিমপেট মাইন, অন্যান্য অস্ত্র ও অপারেশন সামগ্রীসহ কমান্ডােদের নিয়ে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব পাড়ে চরলক্ষ্যা শেল্টারে গিয়ে আশ্রয় নেন। এদিন সকালে ও বিকেলে একই বেতার কেন্দ্র থেকে পঙ্কজ মল্লিকের কণ্ঠে ‘আমার পুতুল আজকে প্রথম যাবে শ্বশুরবাড়ি’ গানটি পরিবেশিত হয়। এটি ছিল চূড়ান্ত অপারেশনের সংকেত। সঙ্গে-সঙ্গে দলনায়ক আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী কমান্ডােদের চূড়ান্ত অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হতে নির্দেশ দেন। তাঁর দেহরক্ষী ও অপারেশনের সম্বয়ক কমান্ডাে খােরশেদ আলম, বীর প্রতীক-কে তিনি নির্দেশনা দিয়ে রেখেছিলেন যে, কোনাে অবস্থায় তিনি (এ ডব্লিউ চৌধুরী) শত্রুর হাতে ধরা পড়ার উপক্রম হলে এরূপ অবস্থায় শত্রুর হাতে ধরা পড়ার চেয়ে সে নিজে যেন তাঁর কাছে রক্ষিত পিস্তল দিয়ে গুলি করে তাঁর (এ ডব্লিউ চৌধুরী) জীবনের অবসান ঘটায়। সেদিন সারাদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছিল, যা ছিল অপারেশনের অনুকূল। ১৪ই আগস্ট রাত ১২টার পরপর অর্থাৎ ১৫ই আগস্ট অপারেশনের জন্য কমান্ডােরা তাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের দিকে এগিয়ে যান। অপারেশন চলে রাত প্রায় ১টা পর্যন্ত। নােঙ্গর করা ১১টি জাহাজ, গানবােট, বার্জ ও অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুর প্রতিটির জন্য ৩ জন করে মােট ১১টি দলে কমান্ডােদের ভাগ করা হয়। ৭ জন কমান্ডােকে নদীর তীরে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়ােজিত রাখা হয়। অতঃপর এ ডব্লিউ চৌধুরীসহ নৌ-কমান্ডােদের বিভিন্ন গ্রুপ লিমপেট মাইন নিয়ে কর্ণফুলী নদীতে ডুবসাঁতারে লক্ষ্যবস্তুর দিকে এগিয়ে যান এবং যথাস্থানে মাইন বসিয়ে সকলেই নিরাপদে ফিরে আসতে সক্ষম হন। প্রতিটি লক্ষ্যবস্তুতে ৩টি করে লিমপেট মাইন স্থাপন করা হয়। কিছু সময়ের মধ্যে এক এক করে বিকট শব্দে মাইনগুলাে বিস্ফোরিত হয় এবং ৯টি পাকিস্তানি জাহাজ ও অন্যান্য নৌযান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নদীতে ডুবে যায়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এটি ছিল একটি সাড়া জাগানাে ঘটনা, যা বিদেশী গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়। এর ফলে পাকিস্তানি হানাদারদের মনােবল দ্রুত ভেঙ্গে পড়ে। অপরদিকে মুক্তিযােদ্ধারা যুদ্ধে বিজয় লাভের ব্যাপারে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
কমডাের এ ডব্লিউ চৌধুরী স্বাধীন বাংলাদেশের নৌবাহিনী গঠনের সঙ্গে শুরু থেকেই ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি হলেন এর প্রথম ক্যাডেট। যুদ্ধ শেষে চট্টগ্রাম পাের্ট থেকে পাকিস্তানি হানাদারদের বসানাে মাইন ও ধ্বংসপ্রাপ্ত ডুবন্ত জাহাজ অপসারণ করে নতুন করে পাের্ট সচল করতে রাশিয়ার (সাবেক সােভিয়েত ইউনিয়ন) টিমের সঙ্গে তিনি কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাঁকে ‘বীর উত্তম’ ও ‘বীর বিক্রম’ উভয় রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত করা হয়, যা খুবই বিরল। ১৯৯৭ সালের ১লা জানুয়ারি তিনি অবসরে জান এবং বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন। তাঁর স্ত্রীর নাম সাবেরা ওয়াহেদ চৌধুরী। এ দম্পতির ১ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তান রয়েছে। [হারুন-অর-রশিদ]
তথ্যসূত্র: আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী, বীর উত্তম, বীর বিক্রম-এর সঙ্গে ঢাকায় একাধিক সাক্ষাৎকার, ২০১৯; মুক্তিযােদ্ধা আবু সাইদ সরদার (সম্পদিত), অপারেশন জ্যাকপট – চট্টগ্রাম, নেভাল কমান্ডাে এন্ড এসােসিয়েটস ২০১৫

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!