বীর প্রতীক এ বি মাে. আবদুল হাকিম
এ বি মাে. আবদুল হাকিম, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৫) নৌ-কমান্ডাে এবং ৩০শে অক্টোবর চাঁদপুর ‘লন্ডন ঘাটে লিম্পেট মাইন দিয়ে পাকিস্তানি রসদবাহী জাহাজ ধ্বংসকারী বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪৫ সালের ৬ই নভেম্বর চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের মদনেরগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সােনামিয়া। পাটোয়ারী এবং মাতার নাম শাহানারা খাতুন।
এ বি মাে. আবদুল হাকিম এইচএসসি পাস করে ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যােগ দেন। নৌবাহিনীর পিএনএস বাহাদুরে প্রশিক্ষণের পর তিনি পাকিস্তানের বিভিন্ন নৌঘাটিতে চাকরি করেন। ৭১এর ফেব্রুয়ারিতে ২ মাসের ছুটি নিয়ে তিনি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করে। ইতােমধ্যে ছুটি শেষ হয়ে গেলে পাকিস্তানে না গিয়ে বিমান বন্দর থেকে পালিয়ে গিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যােগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি ভারতের আগরতলায় গিয়ে ট্রেনিং ক্যাম্পে যােগ দেন এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। জুন মাসের মাঝামাঝি তিনিসহ ৮ জন নাবিককে মুর্শিদাবাদের পলাশী ক্যাম্পে নৌ-কমান্ডাে হিসেবে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানাে হয়। প্রশিক্ষণ সমাপ্তির পর বাংলাদেশে ফিরে বদিউল আলমের নেতৃত্বে তিনি ১৫ই আগস্ট সারাজাগানাে অপারেশন জ্যাকপট-এর পরিকল্পনা অনুযায়ী চাঁদপুর নদীবন্দর অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি চাঁদপুর নদীবন্দরে কয়েকটি দুঃসাহসিক অপারেশনে অংশ নেন।
চাঁদপুর শহরের ডাকাতিয়া নদীর লন্ডন ঘাটে আমেরিকার পতাকাবাহী জাহাজ এম ভি লােরেন পাকিস্তানি সৈন্যদের খাদ্য ও সমরাস্ত্র নিয়ে নােঙ্গর করেছিল। চাঁদপুরে অবস্থানরত এ বি মাে. আবদুল হাকিমসহ কয়েকজন নৌকমান্ডাে তা জানতে পেরে এ জাহাজে অপারেশন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। ৩০শে অক্টোবর রাতে তারা লন্ডন ঘাটের অপর পাড়ে ডব্লিউ রহমান জুট মিলের পাশে অবস্থান নেন। চাঁদপুর বন্দরে তখন পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের নিরাপত্তা জোরদার করে রেখেছিল। তাছাড়া সমগ্র বন্দরে ছিল সার্চলাইট জ্বালানাে এবং পাকিস্তানি গানবােটের আনাগােনা। এ বি মাে. আবদুল হাকিম, মােমিনউল্লাহ পাটোয়ারীসহ ৩ জন রাতের অন্ধকারে বুকে গামছা দিয়ে বাঁধা লিম্পেট মাইন ও কোমড়ে ছুড়ি নিয়ে সাঁতরে পৌঁছে যান লক্ষ্যস্থলে। সফলতার সঙ্গে জাহাজের গায়ে মাইন লাগিয়ে তারা নিরাপদ স্থানে সরে আসেন। একটু পরে বিকট শব্দে ৩টি মাইন বিস্ফোরিত হয়। প্রচণ্ড শব্দে বন্দরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সৈন্য, জাহাজে অবস্থানরত নাবিক সকলেই দিশেহারা হয়ে পড়ে। এ দুঃসাহসিক অভিযানে এম ভি লােরেন জাহাজটি পানিতে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়। পরবর্তী সময়ে এ বি মাে. আবদুল হাকিম চাঁদপুর নদীবন্দর অভিযানকালে শত্রুবাহিনী তাঁকে দেখে ফেললে তিনি মেঘনা নদীতে ঝাঁপ দেন এবং ৭ মাইল নদী সাঁতরে বশীরহাটের চরে গিয়ে ওঠেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক এ বি মাে. আবদুল হাকিমকে বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতার পর তিনি নৌবাহিনীর চাকরিতে বহাল হন। ১৯৮৭ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম মােছা. মনােয়ারা বেগম। এ দম্পতি ১ পুত্র ও ৩ কন্যা সন্তানের জনক-জননী। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড