পাকিস্তানের দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ একবাল আহমেদ
একবাল আহমেদ (১৯৩৩-১৯৯৯) পাকিস্তানের দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ। তিনি ১৯৩৩ সালে ভারতের বিহার রাজ্যের ইরকি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ভারত উপমহাদেশ বিভক্তির পর তিনি তার বড়াে ভাইদের সঙ্গে পাকিস্তানে গমন করেন। তিনি লাহােরের ফরমান খ্রিস্টান কলেজ থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক ও পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আধুনিক ইতিহাসে ১৯৫৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কিছুদিন সেনাবাহিনীতে চাকরি করার পর তিনি রােটারি ফেলাে হিসেবে ১৯৫৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার অকসিডেন্টাল কলেজে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য গমন করেন। তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস বিষয়ে অধ্যয়ন করেন এবং ১৯৬৫ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় ও কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি শিকাগাে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলাে ছিলেন। সেখান থেকে তিনি নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে গমন করেন এবং ট্রান্সন্যাশনাল ইনস্টিটিউটে কাজ করেন। তিনি ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজের সিনিয়র ফেলাে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে তিনি হ্যাম্পশায়ার কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যােগদান করেন এবং ১৯৯৭ সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত ঐ পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং একই বছর ইমিরেটাস প্রফেসর নিযুক্ত হন। নব্বইয়ের দশকে তিনি পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডন পত্রিকায় সাপ্তাহিক কলামে লিখতে শুরু করেন। মিশরের দৈনিক আল-আহরাম পত্রিকায়। নিয়মিত তাঁর কলাম প্রকাশিত হতাে। তিনি ১৯৯৯ সালের ১১ই মে মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের বামপন্থী দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ একবাল আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন এবং সেখানে থেকে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে নানামুখী প্রয়াস গ্রহণ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জোরালাে বক্তব্য রাখেন, যা বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে বিশেষভাবে সহায়ক হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনগণ কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন প্রদানের পেছনে তার জোরালাে ভূমিকা ছিল। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২৪শে মার্চ ২০১৩ একবাল আহমেদ-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণােত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড