You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক এ এম মাে. ইসহাক

এ এম মাে. ইসহাক, বীর প্রতীক (১৯৩০-২০১০) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৩০ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার রাধানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম এ এম মাে. হােসেন এবং মাতার নাম মেহেরুন নেছা। এ এম মাে. ইসহাক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়ন করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৬৬ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে চাকরি লাভ করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর তিনি দেশে চলে আসেন। ১৯৭১ সালের মার্চে তিনি ইপিআইডিসি (ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন)-তে কর্মরত ছিলেন। তিনি রাজনীতি-সচেতন ছিলেন। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে চাকরি করায় বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের অন্যায় ও বৈষম্যমূলক আচরণ তিনি প্রত্যক্ষ করার সুযােগ পান। এজন্য ৭১-এর মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নেতৃত্বে অসহযােগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ৪ঠা মার্চ পাকিস্তানিদের পক্ষ ত্যাগ করে তিনি যুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেন।
এ এম মাে. ইসহাক মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে নিজ এলাকা আখাউড়ায় যান। সেখানে ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করেন। এক সময় তাঁকে মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় সংগঠকরা ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে যােগাযােগের দায়িত্ব দেন। তিনি এ দায়িত্ব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পালন করেন। এলাকায় ছুটিতে আসা প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে তাঁরা মুক্তিযােদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করেন। এ এম মাে. ইসহাক ও অন্যদের উদ্যোগে আখাউড়ায় ৩টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খােলা হয়। সীমান্তের বাঙালি ইপিআর সদস্যদের কাছ থেকে তারা প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করেন। অনেক ছাত্র-যুবক এসব কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। ২৫শে মার্চের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আখাউড়ায় আক্রমণ করার জন্য প্রায় ৫ কিলােমিটার দূরবর্তী গঙ্গাসাগর স্টেশনে এসে পৌছলে মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষ থেকে প্রতিরােধ গড়ে তােলা হয়। এ এম মাে. ইসহাক তাঁর নেতৃত্বাধীন কয়েক শত ছাত্রযুবক নিয়ে এ প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশ নেন। কয়েক হাজার মানুষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এখানে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তােলে। কিন্তু কুমিল্লা থেকে আরাে অধিকসংখ্যক পাকসেনা যুক্ত হওয়া এবং তাদের আধুনিক অস্ত্রের মুখে সাধারণ মানুষের প্রতিরােধ ভেঙ্গে পড়ে। এ এম মাে. ইসহাক তার অধীনস্থ মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর পূর্বে তাঁরা আখাউড়া খাদ্য গুদামের তালা ভেঙ্গে ৮ শতাধিক বস্তা চাল নিজেদের দখলে নেন। এসব চাল তাঁরা সীমান্তের ওপারের মুক্তিযােদ্ধাদের কাছে পৌছানাের ব্যবস্থা করেন। তাঁরা আখাউড়া পুলিশ ফাড়ি থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করেন। সেক্টরভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এ এম মাে. ইসহাককে প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়ােগ করা হয়। এ পদে থেকে তিনি ২ ও ৩ নম্বর সেক্টরে অস্ত্র, গুলি, খাদ্য ও অন্যান্য রসদ সরবরাহের দায়িত্ব পালন করেন। এ দায়িত্বে তিনি অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দেন। তিনি একাধিক সম্মুখ যুদ্ধেও অংশ নেন। আখাউড়ার পার্শ্ববর্তী একটি রেলসেতু ধ্বংস করার সময় মুক্তিযােদ্ধারা পাকবাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হন। এখানে দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে অংশ নিয়ে এ এম মাে. ইসহাক বীরত্বপূর্ণ লড়াই করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার এ এম মাে. ইসহাককে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর সরকারি চাকরিতে যােগ না দিয়ে তিনি দেশের শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ১৯৭২ সালে নিজের গ্রাম রাধানগরে শহীদ স্মৃতি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এ এম মাে. ইসহাক ২০১০ সালের ১৩ই অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ১ কন্যা ও ৫ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মেহেরুন্নেছা ইসহাক। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!