You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক এ এস এম এ খালেক

এ এস এম এ খালেক, বীর প্রতীক (১৯৩০-১৯৭২) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৩০ সালে বর্তমান পিরােজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মাে. সােনাম উদ্দীন। এ এস এম এ খালেক অধ্যয়ন শেষে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এরারলাইন্স (পিআইএ)-এ বৈমানিক হিসেবে যােগ দেন। প্রশিক্ষণ ও চাকরি সূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিসহ বিভিন্ন স্থানে তিনি যান। বাঙালিদের স্বাধিকার, স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার দাবির প্রতি সাধারণভাবে তিনি পাকিস্তানিদের বিরূপ মনােভাবের সঙ্গে পরিচিত হন। তাঁর নিশ্চিত ধারণা হয় যে, পশ্চিম পাকিস্তানিদের সঙ্গে বাঙালিদের সমান মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে থাকা সম্ভব নয়। ৭০-এর নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানিরা যে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ করে, তাতে বিক্ষুব্ধ হয়ে এ এস এম এ খালেক পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বাঙালিদের চলমান সংগ্রামে যােগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
৭১-এর ২৫শে মার্চ এ এস এম এ খালেক করাচি থেকে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। প্রথমে তিনি ভারতের আগরতলায় যান। সেখানে তিনি আরাে কয়েকজন বাঙালি বৈমানিকের সঙ্গে মিলিত হন। ২৮শে সেপ্টেম্বর ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর শহরে মুক্তিবাহিনীর এয়ার উইং গঠিত হলে তিনি তাতে যােগ দেন। তখন এয়ার উইং-এর কাছে একটি ডাকোটা বিমান, একটি অটার প্লেন ও একটি এলিউভেট হেলিকপ্টার ছিল। সাধারণ সময় যাত্রীবাহী বিমান চালানাের অভিজ্ঞতা থাকলেও এ এস এম এ খালেকের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিমান চালিয়ে শত্রুপক্ষকে আঘাত করা সম্পর্কে কোনাে ধারণা ছিল না। এজন্য মুক্তিযােদ্ধা বৈমানিকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ এস এম এ খালেক অল্প সময়ের মধ্যে রাডারকে ফাঁকি দিয়ে শত্রুদের ওপর আক্রমণ পরিচালনার কৌশল রপ্ত করেন। তাঁকে ডাকোটা বিমানটি চালিয়ে শত্রুদের ঘাঁটিতে আক্রমণের জন্য নির্বাচিত করা হয়। ডিমাপুর থেকে পাকিস্তানিদের নিয়ন্ত্রণাধীন ঢাকা বিমান বন্দরে আক্রমণ পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা স্থগিত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার এ এস এম এ খালেককে ‘বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ বিমানে যােগ দেন। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী মুক্তিযুদ্ধকালে পাওয়া ডাকোটা বিমানটি বাংলাদেশ বিমানকে প্রদান করে। এ ডাকোটা বিমান দিয়ে ১৯৭২ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ বিমানের যাত্রা শুরু হয়। বিমানের উদ্বোধনী ফ্লাইটের ৪ জন পাইলটের একজন ছিলেন এ এস এম এ খালেক। এরপর তিনি সদ্য স্বাধীন দেশের বেসামরিক বিমান সংস্থা গড়ে তােলার কাজে আত্মনিয়ােগ করেন। ১৯৭২ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি একটি প্রশিক্ষণ বিমান পরিচালনার সময় ঢাকার তেজগাঁও বিমান বন্দরে প্লেন দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। তিনি ২ পুত্র ও ৪ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম রমিজা খালেক। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!