বীর প্রতীক এ কে এম আতিকুল ইসলাম
এ কে এম আতিকুল ইসলাম, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫৪) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৫৪ সালের ১২ই এপ্রিল কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার উত্তর নােয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম এ কে এম সিরাজুল ইসলাম এবং মাতার নাম নাসিমা খাতুন। তিনি ছাত্রাবস্থায় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন-এর সক্রিয় সদস্য। পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যনীতির বিরুদ্ধে ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি সােচ্চার হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০-এর নির্বাচনে তিনি ভূমিকা রাখেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করলে আতিকুল ইসলাম নিজ এলাকায় ছাত্রযুবকদের নিয়ে তাদের প্রতিরােধ করেন। ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘােষণার পর তিনি স্থানীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
এপ্রিল মাসে তিনি হবিগঞ্জের ভারত সীমান্তবর্তী তেলিয়াপাড়ায় এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে ইন্দ্রনগরে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি মৌলভীবাজার, বরপুঞ্জি, জালালপুর, জকিগঞ্জ, আটগ্রাম, কানাইঘাটসহ সিলেটের বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১০ই আগস্ট মুক্তিযােদ্ধাদের একটি দল কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হয়ে হানাদার বাহিনীর লাতু রেলস্টেশন ক্যাম্প আক্রমণ করেন। একটি উপদলের নেতৃত্বে ছিলেন এ কে এম আতিকুল ইসলাম। তাঁদের সার্বিক নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন আবদুর রব। উভয় পক্ষের মধ্যে ১৫ মিনিটের যুদ্ধে দিশেহারা হয়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায়। যুদ্ধে ৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র মুক্তিযােদ্ধারা হস্তগত করেন। ক্যাম্প দখল করে মুক্তিযােদ্ধারা পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। পাকিস্তানি বাহিনী যাতে রিইনফোর্সমেন্ট করতে না পারে সেজন্য মুক্তিযােদ্ধাদের একটি দল কাট অব পার্টি হিসেবে নিয়ােজিত থাকে। বড়লেখা উপজেলা থেকে হানাদার বাহিনীর একটি বড় দল লাতু রেলস্টেশন ক্যাম্প পুনরুদ্ধারে রিইনফোর্স হিসেবে আগত হয়। তাদের ভারী অস্ত্রের মুখে মুক্তিযােদ্ধারা প্রতিরােধ গড়ে তুলতে পারেননি। এ অবস্থায় লাতু ক্যাম্পে অবস্থানরত মুক্তিযােদ্ধারা সংকটে পড়েন। হানাদারদের নতুন দল লাতুতে এসে ব্যাপক শেলিং শুরু করে। এ কে এম আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধারা বিচলিত না হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যান। এক সময় ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে মুক্তিযােদ্ধারা বাধ্য হয়ে পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত নেন। লাতু ক্যাম্প দখল করে তা ধরে রাখতে না পারলেও এ ঘটনা পাকিস্তানি বাহিনীর মনােবলে যথেষ্ট চিড় ধরায়।
লাতু যুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক এ কে এম আতিকুল ইসলাম বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে তিনি স্ত্রী মারুফা ইসলামসহ সপরিবারে কানাডা প্রবাসী হন। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড