বীর প্রতীক এ কে এম রফিকুল হক
এ কে এম রফিকুল হক, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫৩) গণবাহিনীর একটি দলের কমান্ডার ও বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৫৩ সালের ৫ই জুন কিশােরগঞ্জ শহরের পুরাতন কোর্ট রােডে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম এ কে এম নূরুল হক এবং মাতার নাম হাসিনা হক।
রফিকুল হক ১৯৭১ সালের ১৬ই এপ্রিল কিশােরগঞ্জ থেকে ভারতে গিয়ে প্রথমে একটি শরণার্থী শিবির-এ আশ্রয় নেন। এর কিছুদিন পর প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হয়ে আসামের ইন্দ্রনগরে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ চলাকালেই তিনি ৩০ জনের একটি দলের সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে মৌলভীবাজারে প্রবেশ করেন। সেখানে বড়লেখা চা বাগানে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দলের ওপর আক্রমণ করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেন। প্রশিক্ষণ শেষে রফিকুল হককে ৪নং সেক্টরের অধীনে গণবাহিনীর একটি দলের কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়। জুন মাসে তারা সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের একটি সেতু এবং লাতু রেলস্টেশনের পার্শ্ববর্তী রেলসেতু বিস্ফোরক দিয়ে ধ্বংস করেন। এরপর সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের অন্যত্র তাদের পুঁতে রাখা মাইনে পাকসেনাদের একটি জিপ ধ্বংস হলে ১ জন। পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন ও ২ জন সেনা নিহত হয়।
একদিন রফিকুল হক তার দল নিয়ে কালীগঞ্জ বাজারে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্পে অতর্কিতে আক্রমণ করে ১৭টি রাইফেল ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হন। ২১শে জুন শরিফপুর বাজারের পার্শ্ববর্তী রেলসেতু ও বরাক নদীর মাটির বাঁধের অংশবিশেষ বিস্ফোরক দিয়ে ধ্বংস করেন। ফলে সিলেটের সঙ্গে জকিগঞ্জের যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ২৯শে জুন তারা জকিগঞ্জের আটগ্রামে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালান। এ আক্রমণে পাকসেনারা সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে ২ জন ধরা পড়ে। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে রফিকুল হক ৩নং সেক্টরে যােগদান করে আখাউড়া যুদ্ধে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক এ কে এম রফিকুল হক বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন। তিনি ১ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম শিরিন সুলতানা। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড