উলট্ট গণহত্যা
উলট্ট গণহত্যা (কাহালু, বগুড়া) সংঘটিত হয় ৫ই মে। এতে বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়।
উলট্ট কাহালু রেলস্টেশন থেকে পূর্বদিকে বগুড়া সদরে যাওয়ার পথে কাহালু পৌরসভার মধ্যে অবস্থিত। এখানকার গণহত্যায় পাকিস্তানি সৈন্যদের সহযােগিতা করে স্থানীয় অবাঙালি বিহারিদের একটি দল। পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার রেলস্টেশন থেকে রেলযােগে বগুড়া জেলা সদরে যাচ্ছিল। যাত্রাপথে ট্রেনটি কাহালু রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতি করে। সে-সময় স্থানীয় কতিপয় বিহারি নেতা পাকিস্তানি সৈন্যদের ইন্ধন দিয়ে কাহালু জমিদার বাড়ি (বাবুর বাড়ি)-তে নিয়ে যায়। সেখানে হানা দিয়ে তারা চিরকুমার জমিদার ও সেবায়েত (গােবিন্দ জিউ বিগ্রহের সেবায়েত) কালীপদ মজুমদারসহ পালপাড়া ও লক্ষ্মীপুর গ্রামের ২১ জনের মতাে মানুষকে ধরে নিয়ে যায়। যাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলেন- পালপাড়া গ্রামের ভূপিন্দ্রনাথ মহন্ত, কুড়ানু চন্দ্র, কালা চন্দ্র, অভয় চন্দ্র, রাধান্দ্রনাথ, কৃষ্ণ গােপাল মহন্ত ও গৌর গােপাল মহন্ত (এরা সবাই সনাতন ধর্মের অনুসারী ছিলেন) এবং লক্ষ্মীপুর গ্রামের শুকরা, ভুলু কসাই, মাহমুদ আলী ও আমির আলী (আমু)। গ্রামের বাকি লােকজন কোথায় আশ্রয় নিয়েছে এবং মুক্তিবাহিনীর লােকদের কারা আশ্রয় দেয় এবং কোন বাড়ির ছেলেরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছে নির্যাতনের মাধ্যমে তারা এসব তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা করে। এরপর তাদের বন্দি করে কাহালু রেলস্টেশনে নিয়ে যায়। তাদের বগুড়া শহরে পাকিস্তানি বাহিনীর মেজরের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে বলে রেলগাড়িতে তােলা হয়। এরপর পাকিস্তানি সৈন্যরা কাহালু পৌরসভার উলট্ট নামক স্থানে চলন্ত ট্রেন থেকে তাদের নামিয়ে পেছন থেকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। স্থানীয় জনগণ লাশগুলাে নিকটস্থ জমিদারের এক খণ্ড জমিতে গণকবর দেয়। [আহম্মেদ শরীফ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড