You dont have javascript enabled! Please enable it!

উল্লাপাড়া-নওগাঁ যুদ্ধ

উল্লাপাড়া-নওগাঁ যুদ্ধ (উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১১ই নভেম্বর। এতে শতাধিক রাজাকার ও পাকসেনা নিহত হয় এবং মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে ৭ জন পাকসেনা ধরা পড়ে। শত্রুদের বেশকিছু অস্ত্র মুক্তিযােদ্ধাদের হস্তগত হয়।
উল্লাপাড়া-নওগাঁ যুদ্ধ ছিল উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। নওগাঁ পাবনা জেলার চাটমােহর থানার আওতাভুক্ত হলেও যুদ্ধস্থলের এক বিরাট অংশ ছিল উল্লাপাড়া ও তাড়াশ থানার মধ্যে। উত্তরাঞ্চলের মুক্তিযােদ্ধাদের একটি বিরাট অংশ পলাশডাঙ্গা যুবশিবির-এর সদস্য ছিলেন। এ যুবশিবিরের সদস্যরা উল্লাপাড়া-নওগাঁ যুদ্ধে অংশ নেন। শিবিরের পরিচালক আব্দুল লতিফ মির্জা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। প্রতিপক্ষে ছিল ৫ শতাধিক রাজাকার ও পাকসেনা।
নভেম্বর মাসের প্রথমদিকে পলাশডাঙ্গা যুবশিবির নওগাঁ বাজারের পাশে ক্যাম্প স্থাপন করে শক্ত অবস্থান নেয়। মুক্তিযােদ্ধাদের ক্যাম্পের পাশেই ছিল চিমনাই নদী। মুক্তিযােদ্ধাদের এ ক্যাম্পের খবর কয়েকদিনের মধ্যে উল্লাপাড়া, তাড়াশ ও ভাঙ্গুড়া থানা সদরে অবস্থিত পাকসেনারা জানতে পারে। তখন পাকবাহিনী এ অঞ্চলে ব্যাপক নির্যাতন ও জ্বালাও-পােড়াও চালাচ্ছিল। তারা ওয়ারলেসের মাধ্যমে বিভিন্ন থানা সদরে যােগাযােগ স্থাপন করে মুক্তিযােদ্ধাদের ক্যাম্পে আক্রমণ চালানাের প্রস্তুতি নেয়।
১১ই নভেম্বর পাকবাহিনী সড়ক ও জলপথে বিভিন্ন স্থান থেকে এসে যুবশিবিরের ক্যাম্পের অনতিদূরে রহিমপুর, করতকান্দি ও নিমাই চড়ায় অবস্থান নেয়। পাকবাহিনীর অগ্রসর হওয়ার খবরে মুক্তিযােদ্ধারা দ্রুত প্রতিরােধ সৃষ্টি করেন। পাকসেনারা গুলিবর্ষণ শুরু করলে মুক্তিযােদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ করেন। ফলে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে পাকবাহিনীর ভারী অস্ত্রের মুখে মুক্তিযােদ্ধারা দুটি ২ ইঞ্চি মর্টার, একটি এলএমজি, কিছু থ্রি-নট-থ্রি ও চাইনিজ রাইফেল এবং শতাধিক এসএলআর ব্যবহার করেন। অস্ত্র ও গােলাবারুদ কম থাকলেও মুক্তিযােদ্ধারা অসীম সাহস ও কৌশলগত কারণে দুদিক থেকে পাকবাহিনীর অবস্থান ঘেরাও করে ফেলেন। প্রায় ৮ ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকবাহিনী পিছু হটতে শুরু করে। তারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিমান থেকে মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থানের ওপর বােমা ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু পাকবাহিনীর বােমারু বিমানগুলাে ভুলক্রমে নওগাঁ বাজারের পরিবর্তে নওগাঁ জেলা সদরে কয়েক দফা বােমা নিক্ষেপ করে। পাকবাহিনীর এ ভুল বিমান আক্রমণ মুক্তিযােদ্ধাদের বিজয় নিশ্চিত করে। এ-যুদ্ধে শতাধিক রাজাকার ও পাকসেনা নিহত হয়। মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে ৭ জন পাকসেনা ধরা পড়ে। তাদের মধ্যে সেলিম আহমেদ নামে একজন পাঞ্জাবি ক্যাপ্টেনও ছিল। ধৃত পাকসেনাদের কাছ থেকে ১টি এইচএমজি, দুটি ২ ইঞ্চি মর্টার, ১২টি চাইনিজ গান, ৩০টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল ও সাবমেশিন কার্বাইন (এসএমসি)-সহ বিভিন্ন ধরনের ৬০টি অস্ত্র মুক্তিযােদ্ধাদের হস্তগত হয়। এ-যুদ্ধের খবর তখন বিবিসি ও ভয়েজ অব আমেরিকা থেকে প্রচারিত হয়। [কল্যাণ ভৌমিক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!