You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর বিক্রম এ আর আজম চৌধুরী

এ আর আজম চৌধুরী, বীর বিক্রম (১৯৪৬-২০০২) ক্যাপ্টেন, বীর মুক্তিযােদ্ধা, ৮নং সেক্টরের লালবাজার সাবসেক্টর কমান্ডার ও কুষ্টিয়া হানাদারমুক্ত করার প্রতিরােধ যুদ্ধের অন্যতম যােদ্ধা। তিনি ১৯৪৬ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বাজিতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আফতাব উদ্দিন চৌধুরী ও মাতার নাম হালিমা খাতুন। ১৯৬৫ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যােগদান করেন। ১৯৬৬ সালের ৭ই আগস্ট তিনি বেলুচ রেজিমেন্টে কমিশনপ্রাপ্ত হন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার চুয়াডাঙ্গা মহকুমাস্থ ইপিআর-এর ৪নং উইং-এর সহকারী উইং কমান্ডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ফেব্রুয়ারি। মাসেই তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরে বাঙালিদের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাকর্মকর্তাদের এক ধরনের অশুভ তৎপরতা লক্ষ করেন। একজন সচেতন মানুষ হিসেবে তিনি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার সর্বপ্রকার বৈষম্য সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-এর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন একজন বাঙালি হিসেবে তাঁর মনে আশার সঞ্চার করে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ-এ তিনি মুক্তিসংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হন। ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর গণহত্যায় ঝাঁপিয়ে পড়লে তিনি তৎক্ষণাৎ প্রতিরােধ যুদ্ধে যােগ দেন। চুয়াডাঙ্গার ইপিআর-এর উইং কমান্ডার মেজর আবু ওসমান চৌধুরী ও তিনি ইপিআর, পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ ও ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে গঠিত প্রতিরােধ বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে কুষ্টিয়া শহরে ৩০শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরােধ গড়ে তােলেন। ১লা এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৩দিন এখানে যুদ্ধ চলে। যুদ্ধে অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। কিছু পাকসেনা আহত অবস্থায় গ্রামের ভেতর দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতার হাতের ধরে পড়ে নিহত হয়। পাকবাহিনীর হেভি মেশিনগানসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিসেনাদের হস্তগত হয়। এ মেশিনগান দিয়ে তিনি পাকিস্তানি বিমান হামলা প্রতিরােধে সমর্থ হন। এভাবে কুষ্টিয়া সদর হানাদারমুক্ত হয় এবং ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত তা বহাল থাকে। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও ঝিনাইদহের বিষখালী এবং বারবাজার প্রতিরােধযুদ্ধ পরিচালনা করেন। তাঁর পরিচালনা ও নির্দেশনায় সুবেদার আব্দুল মতিন পাটোয়ারীর নেতৃত্বে ২০শে মে কাগুয়ানে, ৩রা জুন মুজিবনগরে, ১৪ই জুন মানিকনগরে, ২০ ও ২১শে জুন মুজিবনগর বিওপি-র রতনপুরে মুক্তিযােদ্ধারা পাকহানাদারদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এছাড়া ক্যাপ্টেন আজম চৌধুরীর নেতৃত্বে একাধিক গেরিলা অপারেশন ও এম্বুশ পরিচালিত হয়। সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যবর্তী সময়ে সাতক্ষীরা জেলার কলারােয়া থানার বালিয়াডাঙ্গার হঠাৎগঞ্জ নামক স্থানে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযােদ্ধাদের এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে ৫০০র অধিক পাকসেনা হতাহত হয়। এ-যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন আজম চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন শফিকুল্লাহ। শফিকুল্লাহ আহত হলে ক্যাপ্টেন মাহবুবকে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রেরণ করা হয়। তিনিও আহত হন এবং ক্যাপ্টেন শফিকুল্লাহকে পাকসেনারা বন্দি করে। যদিও বালিয়াডাঙ্গার অবস্থানটি মুক্তিসেনারা তাদের পক্ষে ধরে রাখতে পারেননি, তবে এখানকার যুদ্ধে পাকসেনারা মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। এ-যুদ্ধে মুক্তিসেনাদের ৮ জন শহীদ ও বহুসংখ্যক আহত হন। ক্যাপ্টেন আজম চৌধুরীর নেতৃত্বে বালিয়াডাঙ্গার যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি স্বরণীয় ঘটনা। মহান মুক্তিযুদ্ধে ক্যাপ্টেন আজম চৌধুরীর সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি পরবর্তীতে কর্নেল পদে উন্নীত হন। এ বীর মুক্তিযােদ্ধা ২০০২ সালের ১৫ই জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!