উত্তর হাশিমপুর বাইন্যাপুকুর যুদ্ধ
উত্তর হাশিমপুর বাইন্যাপুকুর যুদ্ধ (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় দুবার – সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে। চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার এ-যুদ্ধে দুজন পাকসেনা নিহত হয় এবং একজন সাধারণ লােক শহীদ হন। সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে একদিন রাত ৯টার দিকে পাকবাহিনীর দোহাজারী সিএন্ডবি অফিস ক্যাম্প থেকে বেশ কয়েকজন পাঞ্জাবি সৈন্য একটি জিপ ও তিনটি লরিতে করে চট্টগ্রাম শহরের উদ্দেশে রওনা হয়। এর আগে মুক্তিবাহিনীর সাের্স হারুন আল জাফর চৌধুরী (পিতা আবদুল জলিল চৌধুরী) এ খবর সাতছড়িতে অবস্থানরত মীর আহমদ চৌধুরী গ্রুপকে জানিয়ে দেন। এরপরই এ গ্রুপের কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধা উত্তর হাশিমপুর বাইন্যাপুকুরপাড়ে আসেন। হাবিলদার আবু মােহাম্মদ ইসলাম গ্রুপের ডেপুটি কমান্ডার আবুল বশরসহ ৬ জন যােদ্ধা সেখানে তাঁদের সঙ্গে যােগ দেন। রাত ৮টার দিকে আবুল বশরের নেতৃত্বে সব যােদ্ধা বাইন্যাপুকুরের পূর্ব ও দক্ষিণ পাড়ে এম্বুশ রচনা করেন। রাত পৌনে দশটার দিকে জিপ ও তিনটি লরিতে করে পাঞ্জাবি সৈন্যরা বাইন্যাপুকুরের পশ্চিম পাশে আরাকান সড়কে এলে আবুল বশরের নির্দেশে মুক্তিযােদ্ধারা ফায়ার শুরু করেন। পাঞ্জাবি সৈন্যরাও পাল্টা আক্রমণ করে। উভয় পক্ষে ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়। মুক্তিযােদ্ধারা এলএমজি, এসএমজি, এসএলআর, চাইনিজ রাইফেল ও থ্রি-নট-থ্রি ব্যবহার করে বীরদর্পে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা যুদ্ধের পর গুলি ফুরিয়ে গেলে মুক্তিযােদ্ধারা পূর্বদিকে রেললাইনে সরে যান। এযুদ্ধে নজরুল নামে ফটিকছড়ি নিবাসী একজন মুক্তিযােদ্ধা এবং একজন নিরীহ হিন্দু শহীদ হন। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধারা হলেন: ডেপুটি কমান্ডার আবুল বশর (পিতা মাওলানা মাে. ইছহাক, ভাইখলিফাপাড়া, উত্তর হাশিমপুর), মােহাম্মদ ইউছুপ ওরফে ইঞ্চিয়া (পিতা খুইল্যা মিয়া, পশ্চিম হারলা), আবুল কালাম আজাদ (পিতা আহমদ হােসেন, হারলা), আবদুল আলিম (পিতা ওবাইদুর রহমান), ফোরক আহমদ (পিতা আবদুর রশিদ, দক্ষিণ জোয়ারা), সামসুদ্দীন আহমদ (পিতা হােসেন আলী, হাশিমপুর), জমির উদ্দিন (পিতা রাজা মিয়া, জোয়ারা), আছহাব মিয়া (পিতা মতিউর রহমান, মধ্যম চন্দনাইশ), নজরুল (ফটিকছড়ি) প্রমুখ।
সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহের এক রাতে একটি জিপ ও দুটি লরিভর্তি অর্ধশতাধিক মিলিশিয়া দোজাহারীর দিক থেকে চট্টগ্রাম শহরে যাচ্ছিল। তারা রাত ১০টার দিকে উত্তর হাশিমপুর বাইন্যাপুকুরের পশ্চিম পাশে আরাকান সড়কে পৌছলে হাবিলদার আবু মােহাম্মদ ইসলাম গ্রুপের ডেপুটি কমান্ডার আবুল বশর (পিতা মাওলানা মাে. ইছহাক)-এর নেতৃত্বে কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধা তাদের আক্রমণ করেন। প্রায় এক ঘণ্টা যুদ্ধ চলার পর মুক্তিযােদ্ধারা বাইন্যাপুকুরের উত্তর পাশের রাস্তা ধরে পূর্বদিকে রেললাইনে সরে যান। তাঁদের গুলিতে জিপের মধ্যে একজন মিলিশিয়া নিহত হয়। এ-যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধারা হলেন: ডেপুটি কমান্ডার আবুল বশর (পিতা মাওলানা মাে. ইছহাক, ভাইখলিফাপাড়া, উত্তর হাশিমপুর), মােহাম্মদ ইউছুপ ওরফে ইঞ্চিয়া (পিতা খুইল্যা মিয়া, পশ্চিম হারলা), আছহাব মিয়া (পিতা মতিউর রহমান, মধ্যম চন্দনাইশ), জমির উদ্দিন (পিতা রাজা মিয়া, জোয়ারা), আবুল কালাম আজাদ (পিতা আহমদ হােসেন, হারলা), মােহাম্মদ সােলাইমান (পিতা মাে. ইছহাক, অইল্যার বরবাড়ি, হারলা), জয়নাল আবেদীন নিলু (পিতা কাজি ওসমান গণি, জোয়ারা), আবদুল আলিম (পিতা ওবাইদুর রহমান), ফোরক আহমদ (পিতা আবদুর রশিদ, দক্ষিণ জোয়ারা), শিব্বির আহমদ (পিতা সিরাজুল ইসলাম, অইল্যার বরবাড়ি, হারলা) প্রমুখ। [শামসুল আরেফীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড