You dont have javascript enabled! Please enable it!

উদয়পুর গণহত্যা

উদয়পুর গণহত্যা (মােল্লাহাট, বাগেরহাট) সংঘটিত হয় ১০ই সেপ্টেম্বর। এতে ৭ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়। তাদের মধ্যে ৬ জনকেই রাজাকাররা জবাই করে হত্যা করে।
পিরােজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের মাটিভাঙ্গা কলেজের (তৎকালীন আইউব খান কলেজ) দর্শন বিভাগের অধ্যাপক প্রতুল চন্দ্র কর্মকার সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিবার-পরিজনসহ নৌকাযােগে ভারতে যাওয়ার পথে মােল্লাহাটের পাশে মধুমতি নদীতে স্থানীয় রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন। তাঁর বাড়ি ছিল পিরােজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার আমড়াজুড়ি গ্রামে। আমড়াজুড়ি ও পার্শ্ববর্তী সুন্দরগ্রাম গ্রামের তাঁর আত্মীয়-স্বজনরা দুটি নৌকায় চড়ে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়। দুটি নৌকায় ১৬ জন যাত্রী ছিল। তাদের মধ্যে প্রতুলের নববিবাহিত বধূসহ নারী-পুরুষ ও শিশুরা ছিল।
নৌকা দুটিকে টহলরত রাজাকাররা তীরে ভেড়াতে বাধ্য করে। বয়স্ক পুরুষের মধ্যে মণীন্দ্রনাথ ও অহীন্দ্রনাথ ছিলেন প্রতুলের কাকা। অনুভা নামে এক কিশােরীও দলটিতে ছিল। সুনীল কর্মকারের বাড়ি ছিল সুন্দরগ্রাম গ্রামে। সুনীলের শ্যালক কার্তিকের বাড়ি ছিল ঝালােকাঠি জেলার বাউকাঠি গ্রামে। তাদের সঙ্গে প্রচুর নগদ অর্থ ও স্বর্ণ ছিল। তীরে ভেড়ানাের পর রাজাকাররা প্রথমে তাদের সকল নগদ টাকা ও সােনা লুট করে। তারপর সকলকে প্রথমে রাজাকার ক্যাম্পে এবং পরে মােল্লাহাট থানায় সােপর্দ করে। মােল্লাহাট থানার ওসি ছিল এক সিন্ধি পুলিশ ইন্সপেক্টর। তার কুনজর পড়ে কিশােরী অনুভার প্রতি। সে প্রস্তাব দেয় যে, অনুভাকে তার কাছে বিয়ে দিলে পুরাে দলটিকে ছেড়ে দেয়া হবে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে রাজাকাররা অনুভাকে দারােগার কোয়ার্টার্সে তুলে দেয়। এরপর শর্ত অনুযায়ী দলের সকলের জন্য রিলিজ লেটার তৈরি করা হয়। কিন্তু দলটিকে ছেড়ে দেয়ার জন্য যখন নদীর তীরে জড়াে করা হয়, তখন মওলানা ওলিউল্লাহর নেতৃত্বে একদল রাজাকার তাদের ঘিরে ধরে এবং শিশু ও নারীদের আলাদা করে। একজন রাজাকার সতীন্দ্রনাথকে নদীর খুব কাছে নিয়ে একটি সিগারেট খেতে দেয় এবং ধূমপানরত অবস্থায় তাকে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করে। এ দৃশ্য দেখে মণীন্দ্রনাথ আত্মরক্ষার জন্য নদীতে ঝাঁপ দিলে রাজাকাররা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছােড়ে। কিন্তু তিনি সাঁতরে ওপারে উঠে প্রাণ রক্ষা করতে সক্ষম হন। এরপর রাজাকাররা অবশিষ্ট পুরুষ সদস্যদের দড়ি দিয়ে বেঁধে মােল্লাহাটের উত্তরে উদয়পুর গরুর হাটের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে একে-একে প্রতুল কর্মকার, অহীন্দ্র কর্মকার, পংকজ কর্মকার, সুশীল কর্মকার, কার্তিক কর্মকার ও কেশব কর্মকারকে জবাই করে হত্যা করে। [বেনজীর আহম্মদ টিপু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!