উয়ারুক বাজার ব্রিজ যুদ্ধ
উয়ারুক বাজার ব্রিজ যুদ্ধ (শাহরাস্তি, চাঁদপুর) সংঘটিত হয় ৮ই ডিসেম্বর। এতে ২ জন রাজাকার নিহত হয় এবং ৭ জন মুক্তিযােদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণ করে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদারদের যে হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়, তারই ধারাবাহিকতায় তারা চাঁদপুর সদরে হত্যা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযােগ, নারীনির্যাতন ইত্যাদি সংঘটিত করে। ৮ই ডিসেম্বর উয়ারুক বাজার এলাকায় ও ব্রিজের আশেপাশে মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ হয়।
কুমিল্লা-চাঁদপুরে রেল যােগাযােগ চালু রাখার জন্য এবং অবাধে তাদের যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য পাকসেনারা সকল রেলস্টেশন ও রেলব্রিজে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করে। রেল যােগাযােগ ব্যবস্থা ব্যবহার করে তারা বাঙালিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও ধ্বংস লীলা পরিচালনা করে তাদের রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। এদিকে মুক্তিযােদ্ধাগণ পাকবাহিনীর যােগাযােগ বিছিন্ন করার জন্য কখনাে সরাসরি যুদ্ধ, কখনাে গেরিলা যুদ্ধের আশ্রয় নেন।
উয়ারুক রেলস্টেশন, উয়ারুক বাজার রেল লাইন ও সিএন্ডবি রাস্তার ক্রসিং (ঘুন্টিঘর) এবং ঘুন্টিঘরের পশ্চিমে রেলব্রিজ ও সিএন্ডবি রাস্তার ব্রিজ সব সময় পাকবাহিনী রাজাকারদের সহযােগিতায় পাহারা দিয়ে রাখত। ৮ই ডিসেম্বর কুমিল্লা/লাকসাম থেকে রেলপথ দিয়ে হেঁটে পাকবাহিনী উয়ারুক বাজারে আসে। এলাকাটি মূলত বাচ্চু রাজাকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর অবস্থানের কথা জানতে পেরে মুক্তিযােদ্ধাদের বিভিন্ন ইউনিট একত্র হয়ে রেলক্রসিং-এ পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এতে ২ জন রাজাকার ঘটনাস্থলে নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করায় পাকিস্তানি হানাদারদের গােলাবারুদ ফুরিয়ে যায়। মুক্তিযােদ্ধাদের খবর এবং গতিবিধি পাকসেনাদের কাছে পাচারের দায়ে বাচ্চু রাজাকারের নিকট আত্মীয় লাওকোরা দিঘির পাড়ের আবদুস ছমেদকে হত্যা করা হয়। ৭ জন রাজাকার মুক্তিযােদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এ অপারেশনে নেতৃত্ব দেন মুক্তিফৌজের শহীদ উল্যাহ পাটওয়ারী (শহীদ মেম্বার), দেলােয়ার হােসেন খান, আবুল খায়ের, আলী আহম্মেদ, শহীদ মিয়াজী প্রমুখ। [মাে. মিজানুর রহমান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড