উজানিসার গণহত্যা
উজানিসার গণহত্যা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর) সংঘটিত হয় ২৪শে মে। এতে ১২ জন সাধারণ মানুষ ও ১ জন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ হন।
২৩শে মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মাছিহাতা ইউনিয়নের আটলা গ্রামে আক্রমণ চালায়। তারা সেদিন সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন থেকে একটি বগিসহ রেলগাড়ির ইঞ্জিন নিয়ে আটলা গ্রামের পাশে গিয়ে থামে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে আটলা গ্রামে প্রবেশ করে তারা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মান্নান ভূঞা ওরফে মনু মিয়া ও খেলু ভূঞার বাড়িতে আক্রমণ চালায়। প্রথমে তারা আবদুল মান্নান ভূঞাকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর তাদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়।
মাছিহাতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হামিদুল হক হামদু সেদিন আটলায় তার গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। একদিন আগে তিনি খবর সংগ্রহের জন্য আগরতলা থেকে বাড়ি এসেছিলেন। তাঁর আগমনের সংবাদ পেয়েই পাকসেনা ও রাজাকাররা আটলা গ্রামে আক্রমণ চালায়। এলাকার মুসলিম লীগ নেতা সৈয়দ গােলাম মােস্তফা ওরফে মস্তু মিয়া (মাছিহাতা, পরবর্তীতে মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে নিহত)-র সহযােগিতায় রাজাকার কমান্ডার হাফিজউদ্দিন গ্রামটি চিনিয়ে দেয়। পাকসেনা ও রাজাকাররা গ্রামে প্রবেশ করেই বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। ঐ সময় তারা যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই ধরে নিয়ে এক সঙ্গে বেঁধে ফেলে। এভাবে ১৩ জনকে আটক করে তাদের কাছ থেকে মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থান জানতে চায়। তারা কিছুই জানে না বলে জানায়। এরপর তাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে নিয়ে যায় এবং দাতিয়ারায় ওয়াপদা রেস্ট হাউজের পাশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে আটক রেখে তাদের ওপর নির্যাতন চালায়। এর একদিন পর ২৪শে মে রাতে তাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলােমিটার দক্ষিণে উজানিসার ব্রিজের পাশে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে এবং লাশগুলাে পানিতে ফেলে দেয়। এ গণহত্যায় শহীদরা হলেন- আটলা গ্রামের খেলু ভূঞা ওরফে খেলু মিয়া (পিতা মােনা মিয়া ভূঞা), আলী আহাম্মদ ভূঞা ওরফে আহাম্মদ মিয়া (পিতা মােজাহেদ আলী ভূঞা), ওয়াহেদ বক্স ভূঞা। (পিতা কারি গিয়াসউদ্দিন ভূঞা, মুক্তিযােদ্ধা), আমির হােসেন (পিতা খলিল মিয়া), আবদুল মােতালিব ভূঞা (পিতা মওলা বক্স ভূঞা), আয়েশা খাতুন (স্বামী আবুল খায়ের), আবুল খায়ের (পিতা আবদুল হামিদ), ছেমেদ মিয়া (পিতা হাজি মনু মিয়া), মাে. হুমায়ুন কবির ভূঞা (পিতা আবদুস সাত্তার ভূঞা), বাদশা মিয়া (পিতা আবদুস সােবহান), সিদ্দিক মিয়া, ফুলবাড়িয়া গ্রামের আবদুল কুদ্দুস ওরফে কুদ্দুস ঠাকুর (পিতা আত্তাব মিয়া ঠাকুর) এবং বিজয়নগর উপজেলাস্থ সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের খিরাতলা গ্রামের মিরজান মিয়া। [জয়দুল হােসেন]।
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড