You dont have javascript enabled! Please enable it!

উজিরপুর থানা যুদ্ধ

উজিরপুর থানা যুদ্ধ (উজিরপুর, বরিশাল) সংঘটিত হয় ২রা ডিসেম্বর। এ-যুদ্ধে উজিরপুর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
মে মাসের শেষদিকে পাকিস্তানি বাহিনী উজিরপুর থানায় শক্তিশালী ক্যাম্প স্থাপন করে ব্যাপক অস্ত্র ও গােলাবারুদ মজুদ করে। থানার দোতলা পাকা ভবনে পাকিস্তানি সৈন্য, পুলিশ ও রাজাকারের শতাধিক সদস্য সশস্ত্র অবস্থান করত। এ ক্যাম্প থেকে হানাদার বাহিনী বিভিন্ন এলাকায় অপারেশন চালিয়ে গণহত্যা, লুণ্ঠন, নারীনির্যাতন এবং অগ্নিসংযােগ করত। তাছাড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে মুক্তিযােদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লােকজন ধরে এনে এ ক্যাম্পে নির্যাতন করত। এ ক্যাম্প ছিল তাদের সবচেয়ে বড় নির্যাতনকেন্দ্র। ডিসেম্বরের ২ তারিখ আবদুল ওয়াদুদ, আ ন ম আবদুল হাকিম ও নুরু কমান্ডারের নেতৃত্বে শতাধিক মুক্তিযােদ্ধা উজিরপুর থানা আক্রমণ করেন। থানার উত্তর পাশে ডব্লিউ বি ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনকে আড়াল করে মুক্তিযােদ্ধারা গােলাবর্ষণ শুরু করলে পাকিস্তানি সৈন্যরা পাল্টা গুলিবর্ষণ করে। দুদিন ধরে যুদ্ধ চললেও পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের লক্ষণ দেখা যায়নি। মুক্তিযােদ্ধারা এ-সময় থানায় পানি সরবরাহের জন্য স্থাপিত একটি টিউবওয়েল অকেজো করে দেন। একটি চোঙ্গা নিয়ে কমান্ডার আবদুল ওয়াদুদ সরদার পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানালে উল্টো তারা বৃষ্টির মতাে গুলিবর্ষণ করে এবং চিৎকার করে মুক্তিযােদ্ধাদের উদ্দেশে যা বলে তার অর্থ দাড়ায়, আমরা তােমাদের চিনি, তােমাদের কাছে বারটি রাইফেল আছে, তােমরা আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ কর। এমন সময় নুরু কমান্ডার তাঁর বিল্ডিং বিধ্বংসী ফাইবাে ব্রোরিং এনে ডাকবংলাে সংলগ্ন পুকুরপাড়ে স্থাপন করে থানার ভবন লক্ষ করে ফায়ার করেন। পরপর দুবার ফায়ার করলে থানার দোতলা ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণে রাজি হয়। ৫ই ডিসেম্বর ৫৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য, ৩৫ জন পুলিশ ও রাজাকার মুক্তিযােদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণকৃত পাকসেনাদের লঞ্চে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে জনগণকে দেখিয়ে বরিশালের মুক্তিযােদ্ধা ক্যাম্পে সােপর্দ করা হয়। এ-যুদ্ধে উজিরপুর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!