উজ্জ্বলপুর যুদ্ধ
উজ্জ্বলপুর যুদ্ধ (মহেশপুর, ঝিনাইদহ) সংঘটিত হয় সেপ্টেম্বর মাসে। এতে কয়েকজন পাকসেন নিহত এবং বাকিরা পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়।
মহেশপুর উপজেলার নাটিমা ইউনিয়নের অন্তর্গত উজ্জ্বলপুর একটি নিভৃত গ্রাম। মহেশপুর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ভৈরবার দিকে প্রায় ৪ কিমি দূরে সস্তার বাজার। এ বাজারের পশ্চিমে উজ্জ্বলপুর গ্রাম মুক্তিযুদ্ধকালে পান্তাপাড়া গ্রামে মুক্তিযােদ্ধাদের একটি ক্যাম্প ছিল। এখান থেকে উজ্জ্বলপুরের দূরত্ব প্রায় দু-কিমি। গ্রামের পাশে নস্তি বাঁওড়। এ গ্রামের উত্তর প্রান্ত থেকে একটি রাস্তা মহেশপুরের মূল সড়কের সঙ্গে মিলেছে। সংযােগ সড়কের সামান্য দূরে বাঁওড়ের ওপর একটি ছােট কালভার্ট ছিল। মুক্তিযােদ্ধারা পূর্বপরিকল্পনা মােতাবেক এ কালভার্টের পাশে কতগুলাে মাইন পুঁতে রাখেন। হানাদারদের একটি গ্রুপ ঐ পথ দিয়ে যাওয়ার সময় মাইনগুলাে বিস্ফোরিত হয়। এতে কয়েকজন হানাদার নিহত হয়। পেছনে থাকা হানাদারদের আরেকটি গ্রুপ মাইন বিস্ফোরণের ধোয়া পরিষ্কার হয়ে গেলে বৃষ্টির মতাে গুলিবর্ষণ শুরু করে। মুক্তিযােদ্ধা মাহতাবের এলএমজিও মাঝে-মাঝে গর্জে ওঠে। হঠাৎ পাকিস্তানি বাহিনীর মর্টার শেল নিক্ষেপ শুরু হলে মুক্তিযােদ্ধারা অস্ত্রের অভাবে তাদের মােকাবেলা করতে না পেরে বিলের পানিতে নেমে সাঁতার কেটে এক কিমি দূরে নিরাপদ স্থানে চলে যান। সেখান থেকে তাঁরা এলএমজির মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাদের মর্টারের গােলার জবাব দিতে থাকেন। ঐদিন বিকেলে পাকিস্তানি সেনারা ভারী আগ্নেয়াস্ত্রের মাধ্যমে প্রচণ্ড গুলিবর্ষণ করে। মুক্তিযােদ্ধারা অত্যন্ত সন্তর্পণে তা মােকাবেলা করেন। তবে মুক্তিযােদ্ধাদের প্রতিরােধের মুখে পাকিস্তানি সেনারা সামনে এগুতে সাহস পায়নি। এক পর্যায়ে তারা মহেশপুর ক্যাম্পে ফিরে যায়। মুক্তিযােদ্ধারাও তাঁদের পান্তাপাড়া ক্যাম্পে ফিরে যান। এ-যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বীর মুক্তিযােদ্ধা আবদুল আজিজ। [অশােক বিশ্বাস]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড