উত্তর ভূর্ষি অপারেশন
উত্তর ভূর্ষি অপারেশন (পটিয়া, চট্টগ্রাম) ২৭শে অক্টোবর পটিয়া উপজেলার কেলিশহর ইউনিয়নে সংঘটিত হয়। এতে ২ জন রাজাকার নিহত এবং তাদের অস্ত্র মুক্তিযােদ্ধাদের হস্তগত হয়।
ঘটনার দিন ভােরে শাহ আলম গ্রুপ-এর মুক্তিযােদ্ধারা গ্রামের ভট্টাচার্য দিঘির পাড়ে হীরেন্দ্র লাল দে-র বাড়িতে আশ্রয় নেন। গ্রামে হঠাৎ রাজাকার ও পাকসেনারা আসছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ চারদিকে পালাতে থাকে। প্রকৃতপক্ষে তখন পাকিস্তানি সেনারা পটিয়া পিটিআই ক্যাম্প থেকে কেলিশহর গ্রামে প্রবেশ করে গ্রামের দারােগাহাটের ওপর দিয়ে শ্যামবাবুর দিঘির পাড় পর্যন্ত আসে এবং রাজাকাররা ধলঘাট স্টেশন, হরচন্দ্র বড়য়ার রাস্তা ও সত্তরপেটুয়া বড়য়া পাড়া হয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের আশ্রয়স্থলের কাছে আসে। তারা আশ্রয়স্থলটির উত্তর দিকের তিনটি বাড়িও ঘেরাও করে। মুক্তিযােদ্ধারা রাজাকারদের ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে যুদ্ধের প্রস্তুতিস্বরূপ আশ্রয়স্থলটির চারদিকে পজিশন নেন। দুপক্ষের মধ্যে তীব্র গুলি বিনিময় হয়। এতে ২ জন রাজাকার প্রাণ হারায়। যুদ্ধ অনেকক্ষণ চলার পর রাজাকাররা পলায়ন করতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানি সেনারা শ্যামবাবুর দিঘির পাড়ে অবস্থান নিয়েছিল। রাজাকারদের পলায়ন দেখে তারাও গুলি ছুড়তে-ছুড়তে পালিয়ে যায়। মুক্তিযােদ্ধারা নিহত ২ রাজাকারের ২টি রাইফেলস ও গুলি উদ্ধার করেন।
এ অপারেশনে কমান্ডার শাহ আলম (কচুয়াই, পটিয়া), ডেপুটি কমান্ডার উদয়ন নাগ (সারােয়াতলী, বােয়ালখালী উপজেলা), মিয়া মােহাম্মদ জাফর (বাকলিয়া), ভূপাল দাশগুপ্ত (আনােয়ারা), সুজিত বড়ুয়া (তেকোটা, পটিয়া), শামসুজ্জামান হীরা (খলিসাদহ, পাবনা), আনােয়ার হােসেন (রাঙ্গুনিয়া), ফজল আহমদ (তেকোটা, পটিয়া), শেখর দস্তিদার (ধলঘাট, পটিয়া), দেওয়ান মােহাম্মদ আলী (ফরিদপুর), আবুল কাসেম (মিরসরাই), সুশীল চক্রবর্তী (পশ্চিম শাকপুরা), প্রিয়তােষ চৌধুরী (ঠেগরপুনি, পটিয়া), পুলক কুমার দাশ (রতনপুর, পটিয়া), মােয়াজ্জম হােসেন (খুলনা), মােহাম্মদ ইউসুফ (মরিয়মনগর, রাঙ্গুনিয়া), মােহাম্মদ নজরুল ইসলাম (দক্ষিণ রাউজান), মােহাম্মদ কামরুজ্জামান (মিরসরাই), তপন দস্তিদার প্রমুখ মুক্তিযােদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। [শামসুল আরেফীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড