You dont have javascript enabled! Please enable it! রাখাইন সম্প্রদায়ের বীরাঙ্গনা ও নারী মুক্তিযােদ্ধা উ প্রিণছা খে - সংগ্রামের নোটবুক

রাখাইন সম্প্রদায়ের বীরাঙ্গনা ও নারী মুক্তিযােদ্ধা উ প্রিণছা খে

উ প্রিণছা খে রাখাইন সম্প্রদায়ের বীরাঙ্গনা ও নারী মুক্তিযােদ্ধা। তিনি কক্সবাজারের টেকনাফে জন্মগ্রহণ করেন। অনাহারক্লিষ্ট প্রিণছা ৭০-এর জলােচ্ছাসে বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজনকে হারান। সবাইকে হারিয়ে ১৭ বছরের প্রিণছা প্রকৃতির বিরূপতাকে জয় করেন সংগ্রামী চেতনায়। আর্তের সেবায় এক মেডিকেল টিমের সঙ্গে যােগ দেন। এক জাপানি দম্পতি, এক ব্রিটিশ তরুণী আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন ছাত্রের এ মেডিকেল টিমে প্রিণছা সেবিকা হিসেবে নিজেকে নিয়ােজিত করেন দুস্থের সেবায়। প্রিণছা সহ মেডিকেল টিমটি ৭১-এর ফেব্রুয়ারি মাসে পটুয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে চলে যায়।
এপ্রিল মাস থেকে প্রিণছা ও তার মেডিকেল টিম মুক্তিযােদ্ধাদের সেবায় নিয়ােজিত হয়। এক পর্যায়ে মেডিকেল টিম থেকে আলাদা হয়ে প্রিণছা আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসক সুরেণ বাবুর নিকট আশ্রয় নেন। জুলাই মাসে বরগুণা জেলার পাথরঘাটায় সুরেন বাবু এবং প্রিণছা হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। হানাদার বাহিনী সুরেন বাবুকে নির্মমভাবে হত্যা করে। প্রিণছার স্থান হয় হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে। হানাদার বাহিনীর ভােগের সামগ্রীতে পরিণত হন তিনি। অনেকবার হাত বদল হয়ে এক সময় প্রিণছাকে হানাদারদের ঝালকাঠি জেলার বাউকাঠি ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। ইতােমধ্যে প্রিণছা হানাদারদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান। ক্যাম্পে হানাদার বাহিনীর দুই বাবুর্চির সঙ্গে তিনি হয়ে যান তৃতীয় বাবুর্চি। ক্যাম্পে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহকারী বাবুলের সঙ্গে তিনি গােপনে পরিকল্পনা করতে থাকেন। অক্টোবরে প্রিণছা অসুস্থতার ভান করে কৌশলে ক্যাম্প অধিনায়কের অনুমতি নিয়ে ডাক্তার দেখাতে ঝালকাঠি যান। প্রথমে পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রহরায় গেলেও বিশ্বস্ততা অর্জন করায় পরবর্তীতে ৪ দিন পরপর তিনি একাই ডাক্তারের কাছে যেতেন। অসুস্থতার কথা বলে গেলেও ডাক্তারকে তিনি তার গােপন ইচ্ছার কথা বলেন। ডাক্তারের এক ছেলে ছিলেন মুক্তিযােদ্ধা। এ কারণে সহজেই ডাক্তারের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। একদিন ডাক্তারের কাছে প্রিণছা বলেন, তাঁর বিষ চাই। এমন বিষ যার গন্ধ নেই, বর্ণ নেই, রয়েছে তীব্রতা। ডাক্তার কিছুদিন সময় নিয়ে বরিশাল থেকে বিষ এনে প্রিণছাকে দেন। প্রিণছা সেদিন সন্ধ্যায় খুবই যত্ন করে ক্যাম্পের সকলের জন্য রান্না করেন এবং সব খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দেন। এরপর নিজ হাতে সকলকে খাবার পরিবেশন করেন। খাওয়া শেষে ক্যাম্পের সবাই অচেতন হয়ে পড়ে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রিণছা বাবুলের সঙ্গে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যান। ক্যাম্পের ৪২ জন হানাদার সদস্যের মধ্যে বেশ কয়েকজন মারা যায়। বাকিদের ঢাকায় পাঠানাে হয়চিকিৎসার জন্য। মুক্তিযুদ্ধের অবশিষ্ট দিনগুলােতে পালিয়ে বেড়িয়ে চূড়ান্ত বিজয়ের পর আত্মপ্রকাশ করেন নারী মুক্তিযােদ্ধা প্রিণছা খে। [জগন্নাথ বড়য়া]
তথ্যসূত্র: মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া, জনযুদ্ধের গণযােদ্ধা, ঢাকা, গাঁথা প্রকাশনী ২০০৮

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড