You dont have javascript enabled! Please enable it!

উকিলবাড়ি গণহত্যা

উকিলবাড়ি গণহত্যা (মাদারীপুর সদর) সংঘটিত হয় ১৪ই আগস্ট। মাদারীপুর-মস্তফাপুর রােড়ের পাশের গ্রাম উকিলবাড়িতে এ গণহত্যা সংঘটিত হয়। এতে ১৭ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
১৪ই আগস্ট পাকিস্তানের আজাদি দিবসে লখণ্ডা বিলে মতি ওঝার বাড়িতে স্থাপিত ক্যাম্প থেকে একটি এসএমজি, দুটি রাইফেল, এন্টিট্যাঙ্ক মাইন এবং কিছু গ্রনেড নিয়ে মুক্তিযােদ্ধারা নৌকায় করে অপারেশনে বের হন। এ অপারেশনে অংশ নেন মুক্তিযােদ্ধা আতিয়ার রহমান কাজী, হারুন শরিফ, সালাম বয়াতি ও জাফর। তাদের উদ্দেশ্য ছিল উকিলবাড়ি ব্রিজের (স্থানীয়ভাবে এ ব্রিজ ‘গােলআলুর ব্রিজ নামে পরিচিত) কাছে সিএন্ডবি সড়কে এন্টিট্যাঙ্ক মাইন পুঁতে শত্রুর গাড়ি ধ্বংস করা। কিন্তু উকিলবাড়ির সামনে প্রধান সড়কে উঠতেই মাদারীপুরের দিক থেকে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের জিপ ও বাস আসায় তাঁদের পক্ষে মাইন পুঁতে রাখা সম্ভব হয়নি। মাইন না পুঁতে মুক্তিযােদ্ধারা পাকবাহিনী ও রাজাকারদের জিপ ও বাসে গ্রেনেড হামলা চালান। মুক্তিযােদ্ধা জাফরের নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড পাকসেনা বহনকারী জিপের জানালার গ্লাসে বিস্ফোরিত হলে জিপটি রাস্তার অপর পাশে ছিটকে পড়ে। গ্রেনেডের আঘাতে পাকিস্তানি সেনারা মারাত্মকভাবে আহত হয়। পাকিস্তানি সেনাদের গাড়িবহরের ওপর এ এলাকায় সরাসরি গ্রেনেড হামলার এটাই ছিল প্রথম ঘটনা। হামলা করে স্টেনগানের ব্রাশফায়ার করতে-করতে মুক্তিযােদ্ধারা আগে থেকে ঘাটে বেঁধে রাখা নৌকায় কুমার নদী পার হয়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে যান।
পাকসেনাদের আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে এ আর হাওলাদার জুট মিলসের ক্যাম্প থেকে দ্রুত পাকবাহিনীর একটি দল ছুটে আসে। তারা প্রতিশােধ নিতে উকিলবাড়ি গ্রামে প্রবেশ করে। গ্রামে এসে যাকে সামনে পায় নির্বিচারে তাকেই গুলি করে। বৃদ্ধ থেকে শিশু এমনকি শয্যাশায়ী রােগীও রক্ষা পায়নি তাদের নৃশংসতা থেকে। সিদ্দিক হাওলাদার, আবদুর রব হাওলাদার, কাসেম মাতুব্বরের বাড়িসহ অনেকের বাড়ি তারা পুড়িয়ে দেয়। আবদুর রব হাওলাদার, আবদুর রাজ্জাক হাওলাদার, আবদুর রশিদ হাওলাদার, শফিজ উদ্দিন তালুকদার, হাসেম হাওলাদার ও কাসেম মাতুব্বরকে পাকিস্তানি সেনারা তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের বন্দি রেখে ১৯ দিন শারীরিক নির্যাতন করে। পরে তাদের মুক্তি দিলেও নির্যাতনের ফলে শফিজ উদ্দিন হাওলাদার এবং আবদুর রশিদ হাওলাদার বাড়ি ফেরার ৪ দিন পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
পাকিস্তানি বাহিনী ঝিকরহাটি গ্রামের ছেকাম দর্জির বিড়ির ফ্যাক্টরি থেকে ৬ জন বিড়ি শ্রমিককে ধরে এনে উকিলবাড়ি ব্রিজের পাশে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। উকিলবাড়ি গ্রামের শহীদরা হলেন- মকবুল হাওলাদার (পিতা আমির হাওলাদার, উকিলবাড়ি), কবির হাওলাদার (পিতা কালু হাওলাদার, উকিলবাড়ি), ওয়াজেদের পিতা (উকিলবাড়ি; তিনি ছিলেন রােগী), আরশেদ হাওলাদার (উকিলবাড়ি), আবদুর রাজ্জাক হাওলাদার (পিতা মমিন উদ্দিন হাওলাদার, উকিলবাড়ি), আ. কাদের হাওলাদার (পিতা আবদুর রহমান হাওলাদার, উকিলবাড়ি), হাকিম উদ্দিন দর্জি (পিতা এস্কেন দর্জি, উকিলবাড়ি), শাজাহান বেপারী (শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসেছিলেন; তেরবাগদি, আদমপুর), বনা বিবি (স্বামী আমিন উদ্দিন হাওলাদার, উকিলবাড়ি), বরদাকান্ত মালী (পিতা বৈকুণ্ঠ মালী, চোকদারবাড়ী), শরৎ চন্দ্র পাল (পিতা প্রসন্ন পাল, পালপাড়া), সামাদ দর্জি (ঝিকরহাটি), তসলিম হাওলাদার (পিতা মুনসুর উদ্দিন হাওলাদার, ঝিকরহাটি), হারুন বেপারী (ঝিকরহাটি), হাসেম চোকদার (ঝিকরহাটি), রুস্তম বেপারী (মস্তফাপুর) এবং ঝিকরহাটি গ্রামের নাম না জানা একজন। [মাে. শহীদুল কবীর খােকন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!