You dont have javascript enabled! Please enable it! উকিলবাড়ি ব্রিজ অপারেশন (মাদারীপুর সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

উকিলবাড়ি ব্রিজ অপারেশন

উকিলবাড়ি ব্রিজ অপারেশন (মাদারীপুর সদর) পরিচালিত হয় আগস্ট মাসে। এ মাসেই ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর তথাকথিত বিচারের ঘােষণা দিলে মুক্তিযােদ্ধারা এর প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে অপারেশন পরিচালনা করেন। এ রকম একটি অপারেশন পরিচালিত হয় মাদারীপুর জেলার সদর থানার উকিলবাড়ি ব্রিজে। এ ব্রিজে মুক্তিযােদ্ধাদের নিক্ষিপ্ত গ্রেনেডে ৫ জন পাকসেনা ও মিলিশিয়া মারাত্মকভাবে আহত এবং তাদের বহনকারী গাড়িটি ধ্বংস হয়।
৪ঠা আগস্ট ইয়াহিয়া খান বাঙালিদের অবিসংবাদিত নেতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচার করার ঘােষণা দেয়। ১১ই আগস্ট থেকে অতি গােপনে এ প্রহসনমূলক বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বঙ্গবন্ধুকে বিচারের নামে হত্যা করার পাঁয়তারা চলছে। ক্ষোভে-বিক্ষোভে প্রতি সেক্টরে মুক্তিযােদ্ধারা হানাদারদের ওপর আক্রমণের মাত্রা বহু গুণে বাড়িয়ে দেন। ১৫ই আগস্ট দুনিয়া কাঁপানাে নৌকমান্ডাে হামলা অপারেশন জ্যাকপট সংঘটিত হয়। মাদারীপুরের বীর মুক্তিযােদ্ধারাও পাকিস্তানিদের ওপর আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। কমান্ডার তসলিম আহমেদ হাওলাদারের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযােদ্ধারা উকিলবাড়ি ব্রিজে মাইন স্থাপন করে পাকসেনা ও মিলিশিয়াদের ওপর হামলার সিদ্ধান্ত নেন। আতিয়ার কাজী, সালাম বয়াতি, কাজী হুমায়ুন কবির, জাফর, শরীফ হারুন-অর-রশীদ প্রমুখ মুক্তিযােদ্ধা একটি নৌকা নিয়ে খুব ভােরে অপারেশনে যান। তাঁদের হাতিয়ার ছিল ১টি এসএমজি, ২টি রাইফেল, প্রচুর বিস্ফোরক, এন্টিট্যাংক মাইন ও গ্রেনেড। উকিলবাড়ি ব্রিজে মাইন স্থাপনের জন্য আসামাত্র মাদারীপুরের দিক থেকে ১টি লােকাল বাস ও ১টি জিপ ছুটে আসে। সামনের লােকাল বাসে রাজাকার ও মুজাহিদ বাহিনীর সদস্যরা, আর পেছনের জিপে ছিল পাকিস্তানি সেনা ও মিলিশিয়ারা। মাইন পুঁততে না পারায় মুক্তিযােদ্ধারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে পাকসেনাদের বহনকারী জিপে কয়েকটি গ্রেনেড চার্জ করেন। একটি গ্রেনেড গাড়ির জানালার গ্লাসে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে বিস্ফোরিত হলে জিপটি উল্টে রাস্তার খাদে পড়ে যায়। অসম সাহসী বীর মুক্তিযােদ্ধা জাফর হানাদারদের জিপে প্রথম গ্রেনেড চার্জ করেন। গ্রেনেডের আঘাতে ৫ জন পাকসেনা ও মিলিশিয়া মারাত্মকভাবে আহত হয়।
মুক্তিযােদ্ধারা এসএমজি ও রাইফেলের কভারিং ফায়ার দিতে-দিতে পিছু হটে উকিলবাড়ি গ্রামের ভেতর দিয়ে কুমার নদীর পাড়ে চলে যান। তারা আগে থেকে বেঁধে রাখা নৌকায় চড়ে নদী পাড়ি দিয়ে অপর পারে চলে যান। পাকসেনারা হামলার প্রতিশােধ নিতে গ্রামের নিরীহ মানুষের ওপর হত্যাকাণ্ড চালায়, যা উকিলবাড়ি গণহত্যা নামে পরিচিত। [বেনজীর আহম্মদ টিপু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড