উজানপাড়া গণহত্যা
উজানপাড়া গণহত্যা (গােদাগাড়ি, রাজশাহী) সংঘটিত হয় আগস্ট মাসে। এতে ৬ জন গ্রামবাসী শহীদ এবং ৭ জন নিখোঁজ হন।
রাজশাহী জেলার ভারত সীমান্তবর্তী একটি উপজেলা হচ্ছে গােদাগাড়ি। এ উপজেলার আওতাধীন পদ্মা নদীর তীরবর্তী একটি গ্রামের নাম উজানপাড়া। মুক্তিযুদ্ধকালে এ গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযােগীরা গণহত্যা চালায়। সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় গােদাগাড়ি উপজেলার অনেক মুক্তিযােদ্ধা ভারতে অবস্থান করেন। আবার অনেকে উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নেন। ভারত ও গােদাগাড়ির পদ্মার চরে অবস্থানরত মুক্তিযােদ্ধারা সুযােগ বুঝে মূল ভূখণ্ডে এসে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযােগীদের বিভিন্ন স্থাপনায় আক্রমণ পরিচালনা করতেন। এসব অপারেশন পরিচালনার আগে ও পরে তাঁদের পদ্মা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নিতে হতাে। এ আশ্রয়প্রশয় দানের অপরাধে গ্রামবাসীর ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন নেমে আসে। এরূপ পরিস্থিতির কারণে গ্রামের কিছুসংখ্যক পরিবারের সদস্য নিরাপত্তার জন্য ভারতে চলে যায়। বেশিরভাগ গ্রামবাসীই যুদ্ধের সময় দেশে অবস্থান করে।
উজানপাড়া গ্রামের মুক্তিকামী জনগণ অপারেশনের আগে ও পরে মুক্তিযােদ্ধাদের বাড়িঘরে আশ্রয় দিত। দালালদের মাধ্যমে এ সংবাদ পাকিস্তানি বাহিনীর নিকট পৌছে যায়। তারা বিলম্ব না করে গ্রামবাসীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঘটনার দিন পাকিস্তানি বাহিনী উজানপাড়া গ্রামটি ঘিরে ফেলে। তারা প্রেমতলীর রাজাকার কমান্ডার তাহাসেন আলীর সহায়তায় মুক্তিযােদ্ধা ও তাঁদের সহযােগীদের ধরার জন্য অভিযান চালায়। এসময় তারা গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে লুটপাট, ভাংচুর এবং অগ্নিসংযােগ করে। পাকসেনারা প্রতিটি বাড়ি তল্লাশি করে। কিন্তু কোনাে মুক্তিযােদ্ধা না পেয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের আশ্রয় দেয়ার অপরাধে সেখান থেকে ১৩ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে চোখ বেঁধে গােদাগাড়ি রেলবাজারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের গাফফার বিশ্বাসের বাড়ির নিকটস্থ পদ্মা নদীর তীরে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করায় এবং পেছন থেকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। গুলিবিদ্ধ ৭ জনের কোনাে খোঁজ পাওয়া যায়নি। ৬ জন শাহাদতবরণকারী হলেন- আবদুল বারী (পিতা সাহেব জান মণ্ডল), মাে. আরশাদ আলী (পিতা জান মাে. মণ্ডল), লুটু মিয়া (পিতা ইয়াকুব মণ্ডল), ফকির মাহমুদ (পিতা আমানত বিশ্বাস), ঝন্টু (পিতা মজিদ সরকার) এবং লাতু সরকার (পিতা কফিল উদ্দিন সরকার)। এদিন গ্রামের অনেক নারী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। তারা কোরআন পাঠরত এক মহিলাকেও তাদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। [মােস্তফা কামাল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড